গুজব রটিয়ে হিন্দু পল্লীতে হামলা

ফেইসবুকে নবীকে কটাক্ষ করার গুজব রটিয়ে কুমিল্লার হোমনায় হিন্দুপ্রধান একটি গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2014, 01:24 PM
Updated : 29 April 2014, 11:04 AM

রোববার সন্ধ্যায় হোমনা উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঘসীতারামপুর গ্রামে এ হামলায় মূলত পাশের উপজেলা মুরাদনগরের পাঁচকিত্তা গ্রামের কয়েকশ’ মানুষ অংশ নেয় বলে স্থানীয়রা জানায়।

হোমনার থানার ওসি আসলাম শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই হিন্দু যুবক মহানবী (সা.)কে কটাক্ষ করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছে- এমন গুজব রটিয়ে পাঁচকিপটা গ্রামের কয়েকশ’ লোক বাঘসীতারামপুর গ্রামের হিন্দুপল্লীতে হামলা চালিয়ে ২৮টি পরিবারের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।”

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ডা. হরিচরণ দাস নামে এক ব্যক্তি সোমবার অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হোমনা থানায় একটি মামলা করেছেন।

ফেইসবুকে পোস্ট দেয়ার ঘটনার গুজবে নাম আসায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই তরুণ উৎসব দাস ও শ্রীনিবাস দাসকে আটক করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা আসলাম।

“উৎসব ও শ্রীনিবাস এ ধরনের কোনো পোস্ট ফেইসবুকে দেয়নি বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে,” বলেন তিনি।

১১ নম্বর দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম জানান, “পাঁচকিপ্টা গ্রামের রামপুরা মাদ্রাসার মাইক থেকে প্রচার করা হয় যে মহানবীর (সা.) বিরুদ্ধে ফেইসবুকে পোস্ট দেয়া হয়েছে।

“এরপরেই আশপাশের কয়েক গ্রামের বাসিন্দাদের একত্রিত করে বাঘসীতারামপুরের হিন্দু বাড়িগুলোতে আক্রমণ করা হয়।”

হামলার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনার পর পাঁচকিপ্টা গ্রামের সব পুরুষ পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি বলে ওসি আসলাম জানিয়েছেন।

তবে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।

তারা হলেন- হোমনার চান্দেরচর গ্রামের সামাদ মিয়ার ছেলে কবির (৩৫), ফজলুল করিমের ছেলে দীন ইসলাম (২৫), হারুন মিয়ার ছেলে আশিক মিয়া (২১), জাহেদ আলীর ছেলে আলতাফ (২৪), আব্দুস সামাদের ছেলে আবিল মিয়া (২৪), মীর্জাপুর গ্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে হানিফ (২৪), আমির হোসেনের ছেলে আল আমিন (২০), আবুল হাশেমের ছেলে রবিউল্লাহ (২৭), বাঘসীতারামপুর গ্রামের মৃত মনসুর আলীর ছেলে মো. গিয়াস উদ্দিন (৫৩), মোবারক হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক (২৮) এবং জাহেদ আলীর ছেলে রাসেল হোসেন (২০)।

এদিকে সোমবার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুপল্লী পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা, দুই বান ঢেউ টিন ও ২০ কেজি চাল দেন।

দুই বছর আগে কক্সবাজারের রামুতে এই ধরনের ঘটনায় বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা হয়েছিল। গত বছর পাবনায়ও ফেইসবুকে গুজব ছড়িয়ে হামলা হয়েছিল হিন্দুদের ওপর।