পোশাক খাতের ‘অগ্রগতি’ ধরে রাখার তাগিদ

রানা প্লাজা ধসের পর এক বছরে পোশাক খাতের উন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে এ অগ্রগতি অব্যাহত রাখার তাগাদা দিয়েছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2014, 04:48 PM
Updated : 24 April 2014, 05:39 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে সব সময় পাশে থাকার আশ্বাস দেন তারা।

শ্রম মন্ত্রণালয় ও আইএলওর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘রানা প্লাজার এক বছর পর: অগ্রগতি ও সামনে এগোনোর পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা তাদের এ অবস্থান জানান।

তবে ক্ষতিগ্রস্তরা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় এবং ক্ষতিপূরণ দিতে বিলম্বের জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেন দাতা সংস্থার অনেক প্রতিনিধি।

পোশাক খাতে যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আগামীতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও করেন তারা।

আলোচনা সভায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), হল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, ন্যাশনাল কো-অরডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।

আইএলওর উপমহাপরিচালক গিলবার্ট ফোসুন হংবু বলেন, রানা প্লাজা ধস পরবর্তী এক বছরে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন, কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ও সার্বিক পদক্ষেপে অগ্রপতি হয়েছে। এ অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে।

রানা প্লাজা ধসের এতোদিন পরেও ক্ষতিগ্রস্তরা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ আসাটা ‘লজ্জাজনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আইএলওর উপ মহাপরিচালক বলেন, “অনেক কিছু করা হয়েছে। এখন আরো অনেক কিছু করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত নয়। কারখানা পরদির্শন স্বচ্ছভাবে করতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় আইনের পুরো প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।”

তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রানা প্লাজা ধসের পর এ পর্যন্ত গ্রহীত পদক্ষেপকে ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লউ মজীনা।

কারখানা ভবন নিরাপদ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে আগামীতে দেশের পোশাক খাত তাদের লক্ষ্য অর্জনে এগোবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আগামীতেও পোশাক শিল্পের উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা জানান যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন।

এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে সবাইকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেয়ার তাগাদা দেন তিনি।

সেই সঙ্গে পোশাক খাতে ‘প্রকৃত’ পরিবর্তন আনতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান গিবসন।

গত এক বছরে শ্রম আইন সংশোধন, ক্ষতিপূরণ প্রদান, কারখানা পরিদর্শন ও কর্মসংস্থানসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, “সরকার তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি রানা প্লাজা ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর।”

আলোচনার শুরুতে রানা প্লাজায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভায় শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, আইএলওর আবাসিক প্রতিনিধি শ্রীনিবাস রেড্ডি, কানাডার রাষ্ট্রদূত হিদার ক্রুডেন, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত গার্বেন জর্ড ডে জং, ইন্ড্রাস্ট্রিঅল বাংলাদেশের মহাসচিব রায় রমেশ চন্দ্র, এনসিসিডব্লিউইর চেয়ারপারসন জাফরুল হাসান, বিকেএমইএর মোহাম্মদ হাতেম, বিজেএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের তপন চৌধুরী, ইইউ রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা বক্তব্য দেন।