স্বামীর মহত্ত্ব আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চান কায়কোবাদের স্ত্রী

সাভারে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার কাজের সময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক ইজাজ উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী কায়কোবাদের মহত্ত্বকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চান তার স্ত্রী জারমিন আক্তার।

ফয়জুল সিদ্দিকীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2014, 11:13 PM
Updated : 23 April 2014, 11:20 PM

বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রয়াত স্বামী সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন, তাকে হারানোর বেদনা এবং দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সংসারের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন জারমিন।

স্বামী সম্পর্কে তিনি বলেন, “উনি একজন মহৎ ব্যক্তি, আমি তার মহত্ত্ব নষ্ট করতে চাই না। বরং এটাকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চাই।”

ফার্মগেইট এলাকার তেজতুরী বাজারের বাসিন্দা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কায়কোবাদ তার বোনের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।

গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ার পরপরই অন্যদের সঙ্গে উদ্ধার কাজে যোগ দেন তিনি। চার দিনের মাথায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া পোশাক শ্রমিক শাহীনাকে উদ্ধার করতে আট তলা থেকে সুড়ঙ্গ তৈরি করে তৃতীয় তলা পর্যন্ত নেমেছিলেন কায়কোবাদ।

কিন্তু শাহীনাকে উদ্ধারের শেষ মুহূর্তে এসে ড্রিল মেশিনের অগ্নিস্ফূলিঙ্গ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে যায় তার শরীরের ৫০ শতাংশেরও বেশি অংশ।

প্রথমে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল এবং পরে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৩৫ বছর বয়সী কায়কোবাদ। তার মরদেহ ঢাকায় এনে রাষ্ট্রীয় মর‌্যাদায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জারমিন জানান, কায়কোবাদ ছিলেন তার খালাতো ভাই। ছোটবেলা থেকেই পরস্পরকে জানতেন তারা।

“তিনি মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলতেন না। নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়াতেন। যতই দেখতাম ততই মুগ্ধ হতাম।

“ওতো সবগুলো গুণের প্রমাণ দিয়ে ওপারে চলে গেল। তার শুন্যতা পূরণ করা সম্ভব নয়। এখনো স্মৃতি হাতড়িয়ে বেড়াই,” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন কায়কোবাদের স্ত্রী।

জারমিন জানান, ২০০২ সালের ২১ ফেরুয়ারি কায়কোবাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মেয়ে মারিয়া চৌধুরী তিথি (৭) শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে তিহাদ চৌধুরী (৪) ব্লু বার্ড স্কুলের নার্সারির ছাত্র।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন-বিজিএমইএ মারিয়া ও তিহাদের শিক্ষার খরচ বাবদ মাসে তিন হাজার টাকা দেয়।

জারমিন জানান, ঢাকা সেনানিবাসের মধ্যে মাটিকাটা এলাকায় সেনাবাহিনীর দেয়া একটি ফ্লাট পেয়েছেন। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এখন সেখানেই থাকছেন তিনি।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ১২ লাখ টাকার অনুদান এবং অন্য একটি সংস্থা থেকে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পেয়েছেন, যার লভ্যাংশ দিয়েই তাদের সংসার চলে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে শিক্ষকতার প্রস্তাব পান বলে জানান জারমিন।

তবে ছেলে-মেয়েরা ছোট থাকায় সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।