হাড় ভাঙলেও মন ভাঙেনি

রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে শরীরে স্থায়ী ‘সমস্যা’ দেখা দিলেও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি এক দম্পতি;  আবারো তারা সাজিয়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন ভালোবেসে বিয়ে করে গড়ে তোলা ঘর।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2014, 04:46 PM
Updated : 23 April 2014, 06:45 PM

ভবন ধসে আহত হওয়ার পর সিআরপিতে চিকিৎসা নেন মো. অহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আইরিন।

এখনো হাঁটলে ক্লান্ত হয়ে পড়েন অহিদুল, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না তিনি। আর ভারী কোনো কিছু তুলতে গেলে কষ্ট হয় আইরিনের।

এ অবস্থায় সাভারের তালতলায় একটা ছোট্ট স্টেশনারি দোকান চালাচ্ছেন এই দম্পতি।

সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় অহিদুল-আইরিন দম্পতির।

তারা জানান, প্রেমের সম্পর্ক থেকে তিন বছর আগে নিজেরাই বিয়ে করে ঘর বেঁধেছিলেন। ভালোই চলছিল তাদের সংসার।

এক বছর আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজ করতেন রানা প্লাজার তিনতলার নিউ ওয়েব বটম গার্মেন্টসে।

গত বছরের ২৪ এপ্রিল সকালে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর তিনতলায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন দুজনই।

ওই ঘটনা স্মরণ করে অহিদুল বলেন, “রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর নিজের চোখের সামনে আইরিনকে রক্তাক্ত দেখে ভেবেছিলাম ও বেঁচে নেই। এরপরই জ্ঞান হারিয়েছিলাম।

“যখন ওকে ফিরে পেলাম মনটা একটু শান্ত হইলো।”

ভবন ধসের দিনই আহত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিলেন অহিদুল ও আইরিন।

এ দুর্ঘটনায় অহিদুলের বুকের বাঁ পাজরের কয়েকটি হাড় ভেঙে যায়, তার স্ত্রীর ভাঙে কণ্ঠের হাড়।

দীর্ঘদিন সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দুজন।

পরে সিআরপির দেয়া ৭০ হাজার টাকায় তালতলায় ওই দোকান দিয়েছেন তারা।

অহিদুল যখন তাদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, তখন তার পাশে ছিলেন নয় মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী আইরনও।

তিনি বলেন, “বাঁইচা আছি এইজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। এখন ভবিষ্যতে যে সংসারে আসবো তারে নিয়া ভাল মতন বাঁচতে চাই।”

একই ঘটনায় আহত হন সাবিনা আক্তার। চিকিৎসায় সেরে ওঠার পর তিনিও নতুন করে নেমেছেন জীবনযুদ্ধে।

সাবিনা বলেন, সিআরপিতে তিন মাস সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। সাভারে সিআরপি কর্তৃপক্ষের ভাড়া করে দেয়া একটা দোকানে এখন দর্জির কাজ করছেন।

ভবন ধসে পিঠে আর পায়ে আঘাত পাওয়া এই কিশোরী বলেন, “তিন ভাই বোনের মধ্যে আমি বড়। সংসারের দরকারে আমাকে কাজ করতে হয়।

“মন ভাইঙ্গা বইসা থাকার মেয়ে আমি না।”

সিআরপির নির্বাহী পরিচালক মো. শফিক উল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর পাঁচ শতাধিক পোশাক শ্রমিক তাদের ওখানে চিকিৎসা নেন।

“আহতদের অধিকাংশেরই মেরুদণ্ডে আঘাত এবং হাড় ভেঙে গিয়েছিল। আবার কেউ শরীরের কোনো অংশ কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছিলেন।”  

চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের ২৩০ জনকে কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ মেরামত এবং সেলাই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সিআরপির এই কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসায় সেরে ওঠার পর ১৩২ জনকে জীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের পক্ষ থেকে ১৭ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।