রানা প্লাজা ধসের ক্ষতি কাটেনি বিথী-কামনাদের

রানা প্লাজা ধসে হতাহত ও নিখোঁজদের স্বজনের চোখের জল এক বছরেও শুকায়নি।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2014, 03:47 PM
Updated : 23 April 2014, 03:47 PM

গত বছরের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা নামের নয়তলা ভবনটি ধসে পড়ে। এতে ১১ শতাধিক লাশ উদ্ধার করা হয়।

সেই ধংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা লাশগুলোর মধ্যে গাইবান্ধার বাড়ি ছিল ৪৯ জন। আর ধসে নিখোঁজদের মধ্যে ১১ জনের বাড়িও এ জেলাতেই।

সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের এ ঘটনায় নিখোঁজ বিথী খাতুন (২১) ও কামনা বেগমের (২২) স্বজনরা জানান, পরিবারের রোজগেরে ব্যক্তির সঙ্গেই হারিয়ে গেছে তাদের সবকিছু।

সাংবাদিক এসেছে শুনে ভিড় করেছে গ্রামের  নারী-পুরুষ-শিশু।

তারা জানান, বিথী ওই গ্রামের আব্দুল বারী মিয়ার মেয়ে। মেয়ে নিখোঁজ হলেও কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি তিনি।

বারি মিয়া বলেন, “এক বচরে সোরকার ছোলটার খোঁজ দিবার পালো না। বেটি হয়্যাও ছোলটা মোর প্রতি মাসে ২/৩ হাজার ট্যাকা দিলো হয়।”

এখন সারাদিন মজুরি খেটেও তিন সন্তানসহ তার সংসার চলে না বলে জানান তিনি।

গ্রামের সোনা মিয়া ও কামনা বেগমের একমাত্র ছেলে কামরুল ইসলাম। কামনা যখন নিখোঁজ হন, তখন ও ছিল চার বছরের।

সোনা মিয়া বলেন, “এল্যাও মুই সাভারোত ইস্কা (রিকশা) চালাম। ছোলটাও মোর সাথে থাকে। উই সারাদিন খালি ওর মায়োকে খোঁজে। কওতো ওক কি দিয়্যা বুঝাম?” (আমি এখন সাভারে রিকশা চালাই। ছেলে আমার সঙ্গেই থাকে। সারাদিন ও শুধু মাকে খোঁজে। ওকে কি দিয়ে বুঝাই, বল?)

সোনা মিয়ার এ প্রশ্নে উত্তর জানা নেই উপস্থিত কারোর। সবাই নির্বাক চেয়ে থাকে কামরুলের দিকে।

জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী আব্দুল আজিজ জানান, নিখোঁজ কোনো পরিবারই সরকারি অর্থ সহায়তা পায়নি।

নিহত ৪৯ জনের পরিবার অর্থ সহায়তা পেলেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় এখন তাদের দিন কাটানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুদান হিসাবে নিহতদের পরিবার প্রতি এক লাখ করে টাকা দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও তিন দফায় পরিবার প্রতি আরো ৪৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে।

রানা প্লাজায় নিহত সবুজ মিয়া (১৮) দিনমজুর ওয়াহেদ আলীর ছেলে। ভবন ধসের ১৬ দিন পর ছেলের গলিত লাশ ফিরে পান ওয়াহেদ। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন আগেই। বড় ছেলে ভ্যান চালায়। তার আলাদা সংসার। ছোট ছেলের পাঠানো ২/৩ হাজার টাকায়ই চলত বাবা-মায়ের সংসার।

সবুজের বাবা জানান, রোজগেরে ছেলে চলে যাওয়ায় এখন তাদের দিন চলে না।

“সোরকার পোত্তেক মরা (নিহত) পরিবারোত থ্যাকি এ্যাকঝনাক করি চাকরি দিব্যার চাছিলো। এক বচর হয়্যা গেলো, তার তো কোন খবরই নাই।”

এখন তাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বলে জানান ওয়াহেদ আলী।