কায়সারের বিরুদ্ধে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষ্য

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সৈয়দ মো.কায়সারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রসিকিউশনের অষ্টম সাক্ষী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2014, 06:02 PM
Updated : 22 April 2014, 06:02 PM

মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্য দেন মুক্তিযুদ্ধের সময় কায়সার বাহিনীর নির্যাতনে পঙ্গু হওয়া মুক্তিযোদ্ধা শাহ হোসেন আলী ওরফে সাবু।

সাক্ষ্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ জুন বিকালে কায়সার বাহিনীর লোকজন তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে তিনি আর ফিরে আসেননি।

৬৩ বছর বয়সী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ওই দিন কায়সার বাহিনীর সদস্যরা তার বাবা শাহ ফিরোজ আলীকে ধরে শায়েস্তাগঞ্জ ডাকবাংলোয় স্থাপিত পাকবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তার বাবাকে পিলারের সঙ্গে  বেঁধে রাখা হয়।

সেদিনই তার বাবাকে শ্রীমঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানলেও পর তার বাবার কোনো খোঁজে পাননি তিনি।

তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তার নিজ বাড়ীতে ফিরে আসেন। বাড়ীতে পৌঁছে মা ও বাড়ীর অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে তার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা শুনেন।

ওইদিন রাতে কায়সার বাহিনীর সদস্য সলেমান রাজাকার, রমিজ রাজাকর ও সফিক তাদের ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে। পরে তার চোখ বেঁধে নির্যাতন করতে করতে থানায় নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, থানায় নিয়ে চোখ খোলার পর কায়সারকে তিনি থানায় বসা অবস্থায় দেখতে পান। এরপর থানার ওসি ও কায়সার তার কাছে জানতে চায় ভারত থেকে কবে এসেছে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে কী খবর আছে তার কাছে।

“তখন আমি জীবন বাঁচাতে ভারতে যাওয়ার কথা অস্বীকার করি। সে সময় কায়সার ও রাজাকার বারেক মুক্তার থানায় আটককৃতদের বলে, ‘বাঁচতে চাইলে রাজারকার বাহিনীতে যোগ দাও’।”

তাদের সেই প্রস্তাবের জবাবে বলেছি, “মরে গেলেও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেবো না।”

শাহ হোসেন আলী বলেন, এরপরে থানা থেকে তাকেসহ আরো অনেককেই চোখ বেঁধে শায়েস্তাগঞ্জ ডাক বাংলোয় নিয়ে যায়। ওই বাংলোয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অফিসাররা থাকতো।

সেখানেও কায়সার ও পাক বহিনী আটককৃতদের উপর বর্বোরোচিত নির্যাতন চালায়। প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে তাদেরকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়।

তিনি জানান, একপর‌্যায়ে একজন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা তাকেসহ আরও একজনকে ছেড়ে দেয়। ছাড়া পাওয়ার পর থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসা নেন তিনি।

এছাড়া সাক্ষ্যে মাধবপুর বাজারে ১৯৭১ সালের ২৭ ও ২৮ এপ্রিল কায়সারের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ও পাকিস্তানী বাহিনীর ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার বর্ণনাও দেন এ সাক্ষী।

সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে এ সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন কায়সারের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। পরে জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় বুধবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

এর আগে এ মামলার সপ্তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শাহ হোসেন আলীর ছোট ভাই শাহ হাসান আলী ওরফে ফুলু মিয়া।