মীর কাশেমের পক্ষে বোনের সাক্ষ্য

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাশেম আলীর পক্ষে প্রথম সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার ছোট বোন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2014, 05:46 PM
Updated : 22 April 2014, 05:46 PM

মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্য দেন ৫৯ বছর বয়সী মমতাজ নুরুদ্দিন।

সংক্ষিপ্ত সাক্ষ্যে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের মার্চ পর্যন্ত পুরান ঢাকার আগামসি লেনে স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। মীর কাশেম আলী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই তার বাসায় থাকতে আসেন।

“১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল ১৫ থেকে ১৬ বছর। সেসময় আমি পুরুনো ঢাকার আগামসি লেনে ভাড়া বাসায় স্বামী-সন্তাসহ থাকতাম। ১৯৭১ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমার সহোদর বড় ভাই মীর কাশেম আলী আমার ঢাকার বাসায় আসেন।”

তিনি জানান, ১৯৬৭ সালে তার বড় ভাই মীর কাশেম আলী চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন।

সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে এ সাক্ষীকে জেরা করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।

জেরায় মমতাজ জানান, ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগির বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়। একই স্কুল থেকে তিনি ১৯৭০ সালে এসএসসি পাস করেন। ওই বছরের অক্টোবরে চট্টগ্রামে বাবার বাসায় তার প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

জেরার এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, বিয়ের পর কিছুদিন তিনি বাবার বাসায় থাকার পর ১৯৭১ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে বাবা মীর তায়েব আলী তাকে ঢাকার আগামসি লেনের বাসায় দিয়ে যান। আগামসি লেনের তিনতলা ভাড়া বাড়িটির নিচতলায় তারা ভাড়া থাকতেন।

প্রসিকিউশনের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, বাড়ির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। এমনকি বাড়ির নাম, নম্বর এবং বাড়ির মালিকের নামও বলতে পারেননি তিনি।

প্রসিকিউশনের জেরা শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীকে কিছু প্রশ্ন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, ১৯৭১ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কুমিল্লা থেকে তার বড় ভাই মীর কাশেম আলী ঢাকার আগামসি লেনে তার ভাড়া বাসায় আসেন।

মীর কাশেম কুমিল্লা থেকে কেন এলেন জানতে চাইলে সাক্ষী বলেন, “আমার বাবা তখন চাকরির সুবাদে কুমিল্লায় থাকতেন।”

এসময় ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, কেন মীর কাশেম আলী তখন আপনার বাসায় এসে উঠেছিলেন? এর জবাবে সাক্ষী বলেন, আমার ভাই আমাকে সঙ্গ দিতে আমার বাসায় এসেছিলেন।

ট্রাইব্যুনাল আরো জানতে চান, সাক্ষ্যে আপনি উল্লেখ করেছেন আপনার ভাই ১৯৭২ সালের মার্চে অন্যত্র চলে যান, এই অন্যত্রটা কোথায়? সাক্ষী বলেন, আমার স্বামীর চাকরির কারণে আমরা যখন কুমিল্লায় চলে যাই, তখন আমার ভাইও কুমিল্লায় চলে যান।

এরপরে আসামির পক্ষে দ্বিতীয় সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৩ এপ্রিল দিন ঠিক করে মামলার কার‌্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণের আগে ২১ ও ২২ এপ্রিল আসামি পক্ষের করা মোট তিনটি আবেদন খারিজ করে দেয় ট্রাইব্যুনাল। আবেদনগুলোর মধ্যে ছিল, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় জেরা, আসামির পক্ষে আরো কিছু নথিপত্র গ্রহণ এবং তদন্ত সংস্থার কাছে থাকা ১৯৭২ সালের ডালিম হোটেলের মালিকের করা একটি মামলার নথিপত্র চেয়ে আবেদন।

গতবছর ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। তার বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের মধ্যে আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা, লাশ গুম এবং ৩৪ জনকে অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেমকে গত বছর ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।  

মীর কাসেম জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত। তিনি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং রাবেতা আল ইসলামী নামে একটি এনজিও’র সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি।

জামায়াত সমর্থক বলে পরিচিত দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনেরও চেয়ারম্যান তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানেরই সংবাদপত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন।

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করলে মীর কাসেম তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন।