৯ তলার ওই ভবনের বিভিন্ন তলায় ৫টি পোশাক কারখানা ছিল। পঞ্চম তলায় ফ্যান্টম এ্যাপারেলসে আয়রন ম্যানের কাজ করতেন হাবিবুরের দুই ছেলে।
ঘটনার ছয় মাস পরে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে হাবিবুর জানতে পারেন বড় ছেলে মো. সোলায়মানের শেষ ঠিকানা হয়েছে জুরাইন কবরস্থান।
কবরে খোঁজও পাননি মেঝ ছেলে সেন্টুর।
ছলছল চোখে হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলেটার খোঁজ করতে বিজিএমইএ, জেলা প্রশাসনসহ সব জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু কেউই খোঁজ দিতে পারেনি।
“অন্তত যদি ছেলেটার লাশও পাইতাম তাও মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম,” বলেন হাবিবুর।
দুই ছেলের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারি সহায়তাও পাননি তিনি।
নিখোঁজদের পুরো তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় কোনো সাহায্যও বরাদ্দ করেনি সরকার ও মালিকরা।
রানা প্লাজা ধসের পর মেয়ে আসমা বেগমকে খুঁজে পাননি রিকশাচালক মোতালেব শেখ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মাত্র ১৮তে পড়েছিল মেয়েটা। পরিবারে অনেক অভাব, আমাকে বললো, ‘বাবা আমি গার্মেন্টসে কাজ করবো।’ অভাবের সংসার না হলে কোনো দিনও আমার মেয়েটা হারিয়ে যেতো না।
“কত কিছু করলাম, পাইলাম না। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও জানি না।”
মনে ক্ষীণ হলেও মেয়েকে খুঁজে পাবার আশা মোতালেবের।
হাবিবুর, মোতালেব পরিবারের মত অবস্থা রানা প্লাজায় সেদিন কর্মরত শতাধিক শ্রমিকের পরিবারের।
২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সকালে কাজে যাওয়ার পর থেকে এক বছরেও খোঁজ মেলেনি এসব শ্রমিকের।
তবে এরকম পরিবারের প্রকৃত সংখ্যা কত তার কোনো তালিকা গত এক বছরেও তৈরি করতে পারেনি সরকার কিংবা তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
উদ্ধারকারীদের নেতৃত্ব দেয়া সেনাবাহিনীর নিখোঁজ তালিকায় বলা হয়েছে, ২৬১ জন।
এর মধ্যে প্রথম দফায় ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পাওয়া যায় ১৫৭ জনের খোঁজ।
দ্বিতীয় দফায় পরিচয় মেলে ৪২ জনের।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের তালিকা ধরে এখনো নিখোঁজ ১৮০ জন শ্রমিক।
গত মার্চ মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ শ্রমিকদের একটি তালিকা প্রকাশ করে গার্মেন্টস সংহতি নামের একটি সংগঠন। তাদের হিসেবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন একশ ৪৩ জন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপক রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ১৪৩ জনের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। তবে নিখোঁজের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।”
কবে নাগাদ এ তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব আমরা নিখোঁজ শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে চাই। তাই দ্রুত তালিকার কাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছে।”
ইতিহাসের অন্যতম বড় এ ভবন ধসের ঘটনায় নিহত হয় এক হাজার ১৩১ জন শ্রমিক।
জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে।
এদের মধ্যে ৮৫০জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হয়, যাদের অনেকেরই শরীরের একটি বা দুটি অঙ্গহানির ঘটনা ঘটেছে।