শুকনো তিস্তায় হঠাৎ পানি

শুকিয়ে ধূ ধূ বালু চরে পরিণত তিস্তা নদীতে হঠাৎ করে বিপুল পরিমাণ পানির দেখা মিলেছে।

বিজয় চক্রবর্তী কাজল নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2014, 02:42 PM
Updated : 22 April 2014, 04:03 PM

মঙ্গলবার সকালে ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে ৩ হাজার ৬ কিউসেক পানি পাওয়া যায় বলে জানান ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান।

তিনি বলেন, “ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের গেট পেরিয়ে নদীতে পানি এসে পৌঁছে ৩ হাজার ৬ কিউসেক।”

সোমবার সারাদিন নদীতে ৮৩০ কিউসেক পানি থাকলেও মঙ্গলবার সকালে পানি বেড়ে তিন হাজার ছয় কিউসেকে দাঁড়ায়।

প্রকৌশলী মাহবুবর জানান, এ নদীতে গড়ে ৫-৬ হাজার কিউসেক পানি থাকা প্রয়োজন হলেও এ মৌসুমে পানি কমতে কমতে ৪৫০-৫০০ কিউসেকে গিয়ে দাঁড়ায়।

তবে গত ১৩ এপ্রিল ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বেড়ে দেড় হাজার কিউসেকে দাঁড়ায়। এতে সেচ খালের আওতায় থাকা চাষিদের বোরো মৌসুমের শেষ দিকে কিছুটা উপকার হয়েছিল।

এবার নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের খাল, শাখা খাল পানিতে টইটম্বুর হয়ে ভরে উঠেছে। এতে ওই এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

গত বছরের এ সময়ে তিস্তা নদীতে পানি পরিস্থিতি জানতে চাইলে প্রকৌশলী মাহবুবর জানান, ২০১৩ সালের মার্চে তিনবার পরিমাপ করে ২৯১৫, ২৪৮৭ ও ২৯৫২ কিউসেক পানি পাওয়া যায়।

আর এ বছরের মার্চে তিন বার পরিমাপ করে ৫৭৪, ৫৫৩ ও ৫৫০ কিউসেক পানি পাওয়া যায়।

মঙ্গলবার হঠাৎ পর্যাপ্ত পানি পেয়ে আবাদে প্রস্ততি নিতে শুরু করেছেন জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ইটাখোলা গ্রামের কৃষক আবুবক্কর (৩০)।

তিনি বলেন, “পানির অভাবে জমিতে বোরো চারা লাগাতে পারিনি।

“তাই দেরিতে হলেও যেভাবেই হোক চারা সংগ্রহ করে ধান আবাদ করে পুষিয়ে নেব ক্ষতি।”

সদরের রামনগর ইউনিয়নের বিষমুড়ি গ্রামের তোফায়েল হোসেন (৪৫) সাত দিন পর জমিতে সেচের পানি পেয়ে খুবই খুশি।

তিনি বলেন,“পানির অভাবে প্রায় মরতে বসেছিল ধানক্ষেত।

“এবারে যে পানি পেয়েছি তা দিয়ে অনেকটাই চাহিদা পূরণ হয়েছে আমার।”

আরেক কৃষক রামনগর ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামের তৈয়ব আলী সরকার বলেন, “এবার বেশ কয়েক দিন থেকে জমিতে পানি দেয়ার জন্য আমাদের হাহাকার শুরু হয়েছিল।

শেষ সময়ে পর্যাপ্ত পানি উপকারে আসলেও ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি।

তিস্তা নদীতে পানি অভাবে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলার বোরো চাষিরা পানির অভাবে পড়ে চরম বেকায়দায়। পানির জন্য শুরু হয় হাহাকার।

এরই মধ্যে নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করা শুরু করে।

একই দাবিতে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে তিস্তা অভিমুখে বিএনপির লং মার্চ রওনা হয়েছে। বুধবার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার হেলিপ্যাডে সকাল ১১টায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তাদের এই কর্মসূচি।

সেই সমাবেশ শুরুর আগেই ব্যারাজ পয়েন্টে এখন অথৈই পানি।