অন্যদিকে ক্লাবটি উন্মুক্ত করার দাবিতে হাই কোর্টে তাদের রিট আবেদনের শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক হয়ছে আগামী রোববার।
শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব মাঠটি বন্ধ করে তাতে স্থাপনা তৈরি করায় তার বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠন ও কয়েকজন ক্রীড়াবিদ আন্দোলনে নেমেছেন।
‘মাঠ দখলের’ বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা এক কর্মসূচি থেকে ওই মাঠে ঢুকলে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশের’ অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে গত ১৮ মার্চ মামলা করে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
ক্লাব সম্পাদক এম আরিফুর রহমানের করা ওই মামলায় মঙ্গলবার ঢাকার হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন চার আসামি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও ইকবাল হাবিব, ক্রীড়াবিদ কামরুননাহার ডানা এবং সালমা শফী।
তাদের আইনজীবী মোহাম্মদ আমিনুল হক টিপু জানান, মহানগর হাকিম এম এ সালাম দুই হাজার টাকা মুচলেকায় চারজনকে জামিন দিয়েছেন।
ধানমণ্ডি মাঠটি দখলমুক্ত করতে সোমবার হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন স্থপতি মোবাশ্বেরসহ ছয়জন। মঙ্গলবার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. হাবিবুল গণির বেঞ্চে এর ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই মামলায় শুনানি করতে চান উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সময় চাওয়া হলে আদালত আগামী রোববার শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করে।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। সঙ্গে ছিলেন এএম আমিন উদ্দিন ও ইকবাল কবির লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তাইতাস হিল্লোল রেমা।
ধানমণ্ডি আট নম্বর মাঠ হিসেবে পরিচিত এই স্থানটি শেখ জামালের নাম ব্যবহার করে কিছু ক্রীড়া সংগঠক ‘দখলের পাঁয়তারা’ করছেন বলে দাবি রিট আবেদনকারীদের। এলাকাবাসীর জন্য মাঠটি উন্মুক্ত করে দেয়ারও দাবি তাদের।
অন্যদিকে শেখ জামালের কর্মকর্তারা বলছেন, এই মাঠটি ‘অভিজাতদের’, সাধারণদের এখানে আসার সুযোগ নেই।
মোবাশ্বের হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় যে বিঘার ৮০০ প্লট বিক্রি করা হয়েছে, ওই প্লট ক্রেতাদেরকে বলা হয়েছিল, এই এলাকায় এই এই উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। তোমরা সবাই সম্মিলিতভাবে এ সবের সুবিধা পাবে। এখন সেই অধিকার কেড়ে নিয়ে একটি ক্লাবকে দেয়া হচ্ছে।”
এলাকার মহাপরিকল্পনায় মাঠটিকে ‘পার্ক’ হিসাবে দেখানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে যে কেউ তাদের বিনোদনে জন্য আসতে পারে। ক্লাবের লোকজনও আসতে পারে। কিন্তু তারা সেখানে কোনো স্থাপনা বানাতে পারবে না। অন্যদের প্রবেশাধিকার কেড়ে নিতে পারবে না।”
রিট আবেদনে অবিলম্বে ধানমণ্ডি মাঠে সব স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, রাজউকের পরিচালকের (প্রশাসন) প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওই মাঠে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে রাজউকের পরিচালক প্রশাসনের দেয়া চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত চেয়েছেন রিট আবেদনকারীরা।
ধানমণ্ডি মাঠে চলমান সকল অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ, বিদ্যমান সব স্থাপনা উচ্ছেদে কেন স্থানীয় সরকার সচিব ও এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়।
বৃহত্তর পরিকল্পনার (মাস্টার প্লান) আলোকে উন্মুক্ত জায়গা হিসাবে ধানমণ্ডি মাঠে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার ও ব্যবহার নিশ্চিতে এই দুই বিবাদীকে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানাতেও রুল চাওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার সচিব, গৃহায়ন সচিব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন), এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের প্রেসিডেন্টকে রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।