বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা এবারো অনিশ্চিত

সরকারের ঘোষণা থাকলেও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত পদ্ধতিতে এবার ভর্তি পরীক্ষা নেয়া অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2014, 05:11 PM
Updated : 22 April 2014, 03:57 AM

সমন্বিত পদ্ধতিতে না হলে সরকারি ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বরাবরের মতোই আলাদাভাবে ৩৬টি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে গত বছর সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু তারপর এনিয়ে বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। কবে নাগাদ এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হবে, তাও স্পষ্ট করে বলছেন না কেউ।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উদ্যোগ আছে। উপাচার্যদের সঙ্গে আবারো বসব।”

‘বড়’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা রাজি হয়েছে। এখন কিছু একটা করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি শুরু করতে না পারার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই অনেকটা দায়ী করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বছর সব উপাচার্যকে নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবছর থেকে শুরু করা হবে। এখনো সেই সিদ্ধান্তই আছে।

তবে ইউজিসি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে কবে বৈঠকে বসবে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় আলোচনা করা হবে।

তবে কবে নাগাদ ওই সভা হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

১১ লাখ শিক্ষার্থী বর্তমানে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিচ্ছেন। জুন মাসে এই পরীক্ষা শেষের তিন মাসের মধ্যে ফল ঘোষণা করা হবে। সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের পরপরই শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া।

সমন্বিত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই কেন- এই প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “উপাচার্যদের নিয়ে আবারো বৈঠক করা হবে।”

এর মধ্যে গত বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরা ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিতভাবে নেয়ার উদ্যোগ নিলেও সিলেটে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তা ভেস্তে যায়।

বর্তমানে মেডিকেল কলেজগুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে অর্থাৎ, একই প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়ে পছন্দক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা (ফাইল ছবি)

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা প্রচলনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দাবি থাকলেও কয়েক বছর ধরে ‘চেষ্টা’ করে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মনে করেন, নানা জটিলতায় সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু করা না গেলেও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে ভর্তি পরীক্ষার প্রচলন করা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ না করতে পারার কারণ হিসাবে এই অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে নিজস্ব নীতিমালায় চলে বলে তাদের বাধ্য করা যায় না।

সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অসুবিধাগুলো দূর হবে স্বীকার করে অধ্যাপক নজরুল বলেন, এটি প্রচলনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকতে হবে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-অবরোধের কারণে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।

বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একাধিকবার পিছিয়ে যায়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন থেকে পাঁচবার পর্যন্ত পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয়।

সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। এতে ভোগান্তি ও খরচ কমে যাবে।

বর্তমানে ঘরে বসেই অনলাইন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম পূরণ ও প্রবেশপত্র সংগ্রহ করা যায়।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত হলে একটি ফরম পূরণ করেই একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে।

আর ফল প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে কোচিং ‘বাণিজ্য’ কমে যাবে বলেও মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী।