নদীটি নাব্যতা হারানোকে ২০০০ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের সীমান্ত জেলাগুলোয় ভয়াবহ বন্যার একমাত্র কারণ হিসেবে এক জরিপে দেখায় দুদেশের প্রতিনিধিরা।
এ নদী ভারতের সীমান্ত শহর বনগাঁর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। এরপর দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালিন্দী রায়মঙ্গল নদীতে মিশে সুন্দরবন হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
ইছামতি নদী পাড়ের বাসিন্দা শার্শা উপজেলার অগ্রভুলটের গ্রামের ইছহাক আলি, রুদ্রপুরের আজিজুল ইসলাম, গোগার আব্দুল মান্নান ও পুটখালির আমিনুর রহমান জানান, এক সময় তীব্র স্রোতের কারণে যে নদীতে নামতে মানুষ ভয় পেত, সেটি পলি জমে প্রায় মরে যায়।
খননের পর নদীটি প্রাণ ফিরে পাওয়ায় দুই বছর ইছামতিপাড়ের বাসিন্দারা অনায়াসে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারে।
সরজমিনে দেখা যায় সীমান্তের দুপারের দখলদাররা বাঁশ পুঁতে বেড়িবাঁধ দেয়ায় কচুরিপানা এসে নদীটি ভরে গেছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ এ কারণে নদীতে জোয়ার-ভাটা বন্ধ হয়ে গেছে।
এভাবে চলতে থাকলে তাদের আশঙ্কা নদীটি আবারও নাব্যতা হারাবে।
শার্শার পুটখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফ্ফার সরদার জানান, নদীটির ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার পর প্রতি বর্ষা মৌসুমেই নদীর তীরের গ্রামগুলো ডুবে যেত।
শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, “সীমান্ত অঞ্চলের বর্ষা মৌসুমের পানি ইছামতি নদী দিয়েই একমাত্র অপসারণ সম্ভব বলে নদীটি খননের সিদ্ধান্ত নেয় দুদেশ।
যশোরের বেনাপোলের পুটখালী থেকে চান্দুড়ীয়া পর্যন্ত ইছামতির দুই পাড় বন্যামুক্ত করতে এবং কৃষিকাজে পানির প্রয়োজন মেটাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে নদীটি পুনখনন করা হয়।
২০১০ সালের মার্চে খনন শুরু হয়ে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয় সংস্কারের কাজ।
এতে ভারতের আংরাইল থেকে কালাঞ্চি সেতু পর্যন্ত এবং বাংলাদেশের শার্শার পুটখালী থেকে গোগা সীমান্ত হয়ে কলারোয়ার চান্দুড়িয়া সীমান্তের মেইন-১৭ নম্বর পিলার পর্যন্ত ইছামতি নদীর ২০ দশমিক ৪১ কিলোমিটার এলকা পুনখনন করা হয়।
এতে অর্ধেকের বেশি খরচের জোগান ভারত সরকার দেয় বলে জানান শার্শা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে শত কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা এ নদী অবৈধ দখলের অভিযোগ নিয়ে কথা হয় শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম শরিফুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নদী দখলের বিষয়টি আমি এইমাত্র শুনলাম।”
তবে কয়েকদিনের মধ্যে নদীটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।