রামেকে চিকিৎসকদের হামলায় ১০ সাংবাদিক আহত

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চিকিৎসকদের হামলার শিকার হয়েছেন কয়েকজন সাংবাদিক।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2014, 03:50 AM
Updated : 21 April 2014, 05:48 AM

হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান জানান, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকের এ ঘটনায় অন্তত ১০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

এদের মধ্যে গুরুতর একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকরা বেশ কয়েকটি ক্যামেরাও ভাংচুর করে।    

এদিকে চিকিৎসকদের হামলার সময় কর্তব্যরত পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠায় সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে রাতেই বোয়ালিয়া থানার ওসি সাইদুর রহমান ভূইয়াকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

রাজশাহী টেলিভিশন রিপোর্টার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক রাসেল ও রায়হানকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি হলে রাতেই রাসেলকে ঢাকায় পাঠানো হয়। আর অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আহত রায়হান ‘চ্যানেল ২৪’ এবং রাসেল মাহমুদ ‘যমুনা টেলিভিশনের’ ক্যামেরা পার্সন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালের ১৩ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দুর্ঘটনায় আহত আকাশের (২৫) চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে তার ভাই রোজের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসক সুব্রতর হাতাহাতি হয়। এর জেরে সেখানে থাকা অন্য রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গেও চিকিৎকদের হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।  

খবর পেয়ে হাসপাতালে যান ‘মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের’ ক্যামেরা পার্সন মাসুদ রানা। এ সময় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা তাকে মারধর করে। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জড়ো হয়ে ওই ওয়ার্ডে ফের হামলার চেষ্টা চালায়। এসময় পুলিশ ওয়ার্ডের গেটে তালা মেরে দেয়।

এসআই মিজানুর বলেন, “ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে গেটের তালা ভাঙার চেষ্টা করলে সেই ছবি তুলতে গেলে তারা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়।”

‘চ্যানেল ২৪’ এর রিপোর্টার আব্রান শাইন বলেন, “এ সময় আমাদের ক্যামেরা পার্সন রায়হান ও যমুনার ক্যামেরা পার্সন রাসেল মাহমুদের উপর হামলা চালায় ওই চিকিৎসকরা।

“আমিসহ অন্য সাংবাদিকরা এগিয়ে এলে তাদের উপরও বেপরোয়া হামলা চালানো হয়। চিকিৎসকরা পুলিশের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে সাংবাদিকদের পিটিয়ে জখম করে। কিন্তু সে সময় পুলিশ কোন ভূমিকা নেয়নি।”

সাংবাদিক আব্রান আরো বলেন, “প্রায় অর্ধশত ইন্টার্ন চিকিৎসক বাঁশ ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে সাংবাদিক রায়হান, রাসেল, মাসুদসহ এটিএন নিউজের রুবেল ও ইন্ডিপেন্ডেন্টের লিটনকে জখম করে। তাদের মারপিটে আহত হন ‘জনকন্ঠের’ আলোকচিত্রী  সালাউদ্দিন, ইন্ডিপেন্ডেন্টের রিপোর্টার মাইনুল হাসান জনি, সানশাইনের রিপোর্টার রহিদুল ইসলাম ও বিজয় টিভির রিপোর্টার।”

এদিকে, হামলার খবর পেয়ে সাংবাদিক সংগঠনের নেতা ও রাজশাহীর সকল গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে যান।

পুরো ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা রাতেই হাসপাতালে সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময় সাংবাদিকরা দায়িত্বে অবহেলার জন্য ওসি সাইদুর রহমানকে প্রত্যাহারসহ হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।

এক পর্যায়ে পুলিশের উপর চড়াও হন সাংবাদিকরা। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান রাজশাহী-১ (সদর) আসনের সাংসদ ও হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন, সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, পুলিশ কমিশনার মাহবুর রহমান ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন।

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা সাইদুরকে তাৎক্ষণিকভাবে সবার সামনেই প্রত্যাহার করেন পুলিশ কমিশনার।

সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “সোমবার এ ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ভিডিও ছবি দেখে সাংবাদিকদের উপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আ.স.ম বরকত উল্লাহ বলেন, হাসপাতালে কেন এবং কীভাবে এ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাংবাদিকদের উপর হামলায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ১২টায় সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।