রোববার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে উঠে বাবাকে ধরে যাওয়ার দৃশ্য মনে করে কাঁদলেন এখন প্রৌঢ়ত্বের সীমা অতিক্রম করতে যাওয়া হাসান আলী।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ দেয়া সাক্ষ্যে হাসান আলী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৩ জুন তার বাবাকে ধরে হবিগঞ্জ থানায় নেয়ার পর সেখানে কায়সারকে দেখেছিলেন তিনি।
জাতীয় পার্টির এক সময়ের নেতা কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন হবিগঞ্জের মোকামবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সী হাসান আলী।
তিনি আরো জানান, তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা শাহ হোসেন আলীকেও একাত্তরের ১৬ জুলাই রাতে তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় সলেমান রাজাকারসহ ‘কায়সার বাহিনীর’ লোকজন।
হোসেন আলীকে প্রথমে শায়েস্তাগঞ্জ ডাকবাংলোতে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে শাহজীবাজারে পাক বাহিনীর টর্চার সেলে নিয়ে পাওয়া হয়।
২০-২৫ দিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর হোসেন আলীকে ছেড়ে দেয়া হলেও পরে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়।
হাসান আলী বলেন, কায়সারের সহযোগী সলেমান রাজাকার, আবুল ঠিকাদারসহ আরো অনেকে বাড়ি থেকে জোর করে রিকশায় তুলে হবিগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে যায় তার বাবাকে। তিনি, তার চাচা শাহ আব্দুল হাই ও বাবর আলী মিয়া এসময় রিকশার পেছন পেছন গিয়েছিলেন। সদর থানার বারান্দায় সৈয়দ কায়সারকে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি।
“আমার তিন চাচা বাবাকে ছেড়ে দিতে কায়সারের কাছে অনুরোধ করেন। তখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন,‘তোদের ভাতিজাকে নিয়ে আয়, ওর অস্ত্রগুলো জমা দিতে বল। তবেই তোদের ভাইকে ছাড়া হবে, অন্যথায় তাকে আমরা পাঞ্জাবিদের হাতে তুলে দিব’।”
“পরদিন কায়সার, মুক্তার, আবুল ঠিকাদারসহ খাকি পোশাকধারী আরো দুজন পাকিস্তান আর্মিদের হাতে তুলে দিতে বাবাকে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জের দিকে রওনা হয়।”
এই পর্যায়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন হাসান আলী। কান্না সামলে তিনি বলেন, “আমার চাচা শাহ নূর আলী (বর্তমানে মৃত) বাবাকে ফিরিয়ে আনতে সৈয়দ কায়সার, বারেক মুক্তার, কামরুল হাসান গংদের কাছে বহুবার গিয়েছেন। কিন্তু আমার বাবা আর কোনোদিনই ফিরে আসেননি।”
হাসান আলী জানান, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন স্থানে বাবার লাশের সন্ধানে গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পাননি।
শ্রীমঙ্গলের ওয়াপদা কলোনিতে অগুনতি লাশ দেখতে পাওয়ার কথা জানান তিনি। তবে কাছের চা বাগানে দুটি রামদা দেখতে পান। এর মধ্যে একটি রক্তমাখা ছিল।
রামদা দুটি বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন হাসান আলী। রামদা দুটি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে দেখিয়েছেন তিনি। জব্দ রামদা দুটি জাদুঘরে রাখার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানান এই সাক্ষী।
কায়সার বাহিনীর নির্যাতনে হোসেন আলী পঙ্গু হয়ে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে বলে জানান হাসান আলী।
সাক্ষ্য দেয়া শেষ হলে এ সাক্ষীকে জেরা করেন শুরু করেন সৈয়দ কায়সারের আইনজীবী এসএম শাহজাহান। পরে জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় সোমবার পর্যন্ত এ মামলার কার্যক্রম ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।