‘ক্ষমা’ চেয়ে অব্যাহতি পেলেন গয়েশ্বর

হাই কোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলটির তিন নেতা আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2014, 06:16 AM
Updated : 20 April 2014, 06:47 AM

রোববার সকালে হাই কোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান তারা।

বিএনপি নেতাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত অবমাননার মামলা নিষ্পত্তি করে তাদের অব্যাহতি দিয়েছে।”

গয়েশ্বরের সঙ্গে বিএনপি নেতা ড্যাব সহসভাপতি অধ্যাপক এমএ সালাম ও মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেনও একই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদালত চত্বরে আসেন গয়েশ্বর। সেখানে তিনি তার বেয়াই ও আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরীর চেম্বারে বসেন। পরে সাড়ে ১০টার দিকে আদালতে যান তিনি।

গত ৬ এপ্রিল বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে ‘সব কোর্ট মুজিব কোটে বন্দি’ বলে গয়েশ্বরের করা এক মন্তব্যের জন্য কর্মসূচির আয়োজক সংগঠকের দুই নেতাসহ তাকে তলব করা হয়।

আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে না-তাও জানতে চায় হাই কোর্ট।

তলবের আদেশের পর ওইদিনই আদালতের আদেশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেন গয়েশ্বর।

তিনি বলেন, “আমি আদালতের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ হচ্ছে, এটাই বলতে চেয়েছি।”

তলব করায় আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গয়েশ্বর বলেন, “আদালত ডেকেছেন, তার জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই সুযোগে আমরা কথাগুলো তাদের কাছে বলতে পারব। আমি আদালতের পক্ষে কথা বলছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে বলিনি।

“অবস্থাটা এমন হয়েছে, যার জন্য করি চুরি, সে বলে চোর। ২০ তারিখ আদালতে গিয়ে আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরে বলব, আপনারা (আদালত) বলুন, আপনারা মুক্ত ও স্বাধীন। বক্তব্য শুনে আদালত যদি মনে করেন আমাকে জেলে যেতে হবে- সেই রায় মেনে নেব।”

মুজিব কোটের সঙ্গে তুলনার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আদালতে হস্তক্ষেপের সঙ্গে আদালত অবমাননার তফাৎ কী? কয়েকটি ঘটনা থেকে দেশের জনগণ ও আমাদের সন্দেহ হয়েছে, দেশের বিচার বিভাগ তথা আদালত স্বাধীন ও মুক্ত নয়। মুজিব কোটে সবকিছু বন্দি হয়ে আছে।

“মুজিব কোটের পকেট ছিড়ে আদালতকে মুক্ত করতে হবে-এর মাধ্যমে আমি বিচার বিভাগ ও আদালতের পক্ষে কথা বলেছি। আদালতের বিরুদ্ধে আমি কিছু বলিনি।”

এই প্রসঙ্গে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বিদেশে অবস্থানরত ছেলের নয় বছরের কারাদণ্ড হলেও পরে হাই কোর্টে হাজির হয়ে জামিন নেয়ার কথা তুলে ধরেন এই বিএনপি নেতা।

“নিম্ন আদালত তথা বিচারিক আদালতে হাজির হলে অভিযুক্তকে একদিনের জন্য হলেও জেলে যেতে হয়। কিন্তু আলালের ঘরে দুলাল সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলেকে জেলে যেতে হয়নি, বাড়িতেই থাকলেন। এটা কি আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ নয়?”

এর আগে ২০১১ সালে সংবিধান নিয়ে কটূক্তি করে বিএনপির জোট শরিক ইসলামী ঐক্যজোট নেতা ফজলুল হক আমিনী এবং আদালত নিয়ে মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম তলব ও রুলের মুখে পড়েন।

আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকে ২০১৩ সালে একই ধরনের মামলার মুখে পড়েন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের প্রধান মো. ইব্রাহিম। এ সব মামলা এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

অবশ্য ট্রাইব্যুনাল অবমাননার এক মামলা নিষ্পত্তি করে রফিকুল ইসলাম খানসহ জামায়াতের অন্য দুই নেতাকে দণ্ড দেয়। ২০১৩ সালের জুনে দেয়া ওই রায়ে দণ্ডিত বাকি দুইজন হলেন- ওই সময়কার সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ ও দলটির ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মো. সেলিম উদ্দিন।