শনিবার জনস্বার্থ মামলা নিয়ে এক সেমিনারে দেয়া বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী এই আহ্বান জানান।
নদী দখলদার, ভূমিদস্যুদেরকে ‘মাফিয়া’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
নদী উদ্ধার এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়ে হাই কোর্টের বিচারক থাকাকালে বেশ কয়েকটি আদেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, বাংলাদেশ ও ভারতে এমন অনেক লোক আছে, জনগণের স্বার্থে যাদের ন্যূনতম আগ্রহ নেই। তারা কেবল তাদের নিজেদের লাভটাই বোঝে। তারা কেবল স্বার্থই দেখতে পায়।
“নদী থাকবে কি-থাকবে না, বন থাকবে কি-থাকবে না, তারা তা পরোয়া করে না। তারা সবাই মিলে নদী, ভূমি, বন, পাহাড় দখল করে।”
“বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ- এটা শুনে শুনে ছোট বেলায় বড় হয়েছি। অনুতাপের বিষয় হচ্ছে, আমরা এখন আর এটা বলতে পারি না। কিছু মানুষের লোভের কারণে বাংলাদেশ এখন আর নদীমাতৃক দেশ সেই।”
মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করে এই বিচারক বলেন, সব মুখে খাবার জোগানের সামর্থ্য পৃথিবীর আছে, কিন্তু লোভ মেটানোর সামর্থ্য নেই।
“মানুষের লোভ এখন খুবই বেড়ে গেছে। আমি যখন শহর ছেড়ে যাই, বুকের রক্তক্ষরণ দিয়ে আমি দেখি, ভূমিদস্যুরা নদী দখল করে নিচ্ছে, পাহাড়কে মাটির সঙ্গে মিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের কোনো মানবিকতা নেই।”
“সৌভাগ্যক্রমে কিছু সংগঠন ও আইনজীবী এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছেন। তারা ভূমিদস্যুদের সৃষ্ট ভয়াবহতা বুঝতে পেরেছেন।”
‘ক্ষমতাশালী মাফিয়া লবিস্টদের’ বিরুদ্ধে সরকারকে শক্তিশালী করতে সুশীল সমাজ, আইনজীবী, সচেতন মানুষকে আসার আহ্বান জানান এই বিচারক।
এই প্রসঙ্গে পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী অপহরণের বিষয়টি তুলে ধরে তাকে উদ্ধারে তৎপরতার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদও দেন এই বিচারক।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) আয়োজনে ওই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী।
কেবল পরিবেশগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে খাদ্যে ভেজাল, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়েও জনস্বার্থে মামলা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তাজমহল, গঙ্গা নদী সুরক্ষাসহ বেশ কিছু আলোচিত বিষয়ে মামলা পরিচালনাকারী ভারতীয় আইনজীবী এমসি মেহতাও এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, এইচআরপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।