ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি গম সংগ্রহে ‘সিন্ডিকেট’

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় সরকারি গম ক্রয়ে রাজনীতিবিদ ও আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিআলী আহসান হাবিব, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2014, 04:07 PM
Updated : 20 April 2014, 03:31 AM

উপজেলায় এ মৌসুমে মোট চার হাজার ১২০ মেট্রিক টন গম সংগ্রহের কথা রয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি এ গম ক্রয়ের কথা থাকলেও কোনো কৃষক সরাসরি বিক্রি করতে পারছে না।

এসব গম সরবরাহের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি আমলা, জনপ্রতিনিধি, সমিতি ও ক্লাবকে তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে।    

বৃহস্পতিবার করা এ তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য।

তালিকায় যাদের নাম আছে তারা বাজার থেকে গম কিনে এ তালিকার নির্দিষ্ট বরাদ্দ অনুযায়ী সরকারের নির্ধারিত দামে (প্রতি কেজি ২৭ টাকা) গুদামে সরবরাহ করবেন।

এ তালিকা প্রণয়নের কথা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল মোস্তফা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী নিশ্চিত করেছেন। তবে, ইউএনও আস্রাফুল ইসলামের ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়টি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রানীশংকৈলের আট ইউনিয়ন পরিষদের আট চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম, এনামুল হক, লোকমান আলী, আবুল কালাম, জোতিষ চন্দ্র, জীতেন্দ্র নাথ, শরৎ চন্দ্র ও আবু সুলতান।

অভিযোগে তারা জানান, কৃষকদের কাছ থেকে সরকার সরাসরি গম ক্রয় করার কথা থাকলেও সরকারি আমলা, রাজনীতিবিদরা সিন্ডিকেট করে কৃষকদের ঠকিয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রানীশংকৈল উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানগণ একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।

এবার সরকার প্রতি কেজি গম কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা করে ক্রয় করার ঘোষণা দিয়েছে বলে জানান উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল মোস্তফা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম।

শুক্রবার উপজেলার বলিদ্বারা বাজারে গিয়ে দেখা যায় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি গম ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে ক্রয় করছে।

বলিদ্বারা এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম, আশরাফুল আলমসহ কয়েকজন জানান, সরকার প্রতি কেজি গমের ক্রয়মূল্য ২৭ টাকা ঘোষণা করলেও খাদ্যগুদামে গম বিক্রির কোনো অনুমতি তারা পাননি। এ কারণে ১৮ থেকে ২০ টাকা দরেই তারা গম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সরকারি দামের সঙ্গে বাজার মূল্যের পার্থক্য কেজি প্রতি ৯ থেকে ১০ টাকা।

তারা জানান, তাদের কাছ থেকে গম কিনে সিন্ডিকেটের সদস্যরা সরকারের নির্ধারিত দামে (প্রতি কেজি ২৭ টাকা) গুদামে সরবরাহ করবে।

তালিকাভুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য ৬শ টন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য ৫শ টন, উপজেলা চেয়ারম্যান ৩৫০ টন, ভাইস চেয়ারমস্যান (পুরুষ) ৫০ টন, চেয়ারম্যান (সাবেক) ১শ টন, রানীশংকৈল পৌর মেয়র ৫০ টন, আওয়ামী লীগ ৩২৫ টন, বিএনপি ১শ টন, ওয়ার্কার্স পার্টি ১২০, জাতীয় পার্টি ও সাবেক এমপি ১৫০ টন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ৩০ টন, ন্যাপ ২০ টন।

আট ইউপি চেয়ারম্যান প্রতিজন ৫০ টন, আওয়ামী যুবলীগ ১শ টন, কৃষকলীগ ২০ টন, ছাত্রলীগ ১৩০ টন, জাতীয় কৃষক সমিতি ৫০ টন, মহিলা আওয়ামী লীগ ৫০ টন।

প্রেস ক্লাব ৫০ টন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ৫০ টন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ১শ টন, সংগ্রহ কমিটি ৫০ টন, ওসি এলএসডি ২ জন ১শ টন, টিসিএফ ১শ টন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ১০ জনের প্রতিজন ১০ টন করে, উপজেলা কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ ২৫ টন, উপজেলা অফিসার্স ক্লাব ৫০ টন, কৃষি উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি ৩০ টন, কৃষি অফিস স্টাফ ১০ টন, খাদ্য গুদাম স্টাফ ৫০ টন এবং ইউএনও ৩৫০ টন।

এ ব্যপারে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল মোস্তফা জানান, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আগে আসলে আগে ক্রয় নীতিতেই গম ক্রয় করা হচ্ছে।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার নামে একশ মেট্রিক টন গম বরাদ্দের বিষয়ে বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নাই।”

তবে, ওই তালিকায় তিনি স্বাক্ষর করেছেন কেন জিজ্ঞেস করা হলে জানান, “সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই আমিও সম্মতি দিয়েছি।”

এ তালিকার ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহেব জানেন।

বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা আস্রাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার সবকটি ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার বাসায় গিয়েও তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী বলেন, তার নামেও ৬শ মে. টন বরাদ্দ রয়েছে। এগুলো তিনি এলাকার গম চাষিদের মধ্যে সমবন্টন করেছেন।

অফিসার্স ক্লাব, কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ ইত্যাদির নামের তালিকাভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের মাধ্যমে সরকারি গম ক্রয় করার প্রস্তাব আসে, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোবারক আলী এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।