‘ও মারা যায়নি, নিখোঁজ’

বাবাকে কথা দিয়েছিলেন পহেলা বৈশাখের চার দিনের মধ্যে ঢাকায় ফিরবেন উদয়। কে জানতো সেই চারদিন ধরেই ছেলের লাশের অপেক্ষায় থাকতে হবে তাদের।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2014, 06:09 AM
Updated : 20 April 2014, 04:06 PM

গত ১৪ এপ্রিল সেন্ট মার্টিনে সাগরে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয় আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র, যাদের দুজনের লাশ মিলেছে।

এখনো নিখোঁজ আছেন ইশতিয়াক বিন মাহমুদ উদয় ও সাব্বির হাসান।

উদয়ের বাবা মাহমুদ উল্লাহ গাজী ছেলের সঙ্গে শেষ কথা বলার স্মৃতি হাতড়ে বললেন, “ওর সঙ্গে শেষ যখন কথা হয়েছিল তখন বলেছিল- আব্বা দোয়া করো। বৈশাখ পার করে চারদিনের মধ্যেই ঢাকা চলে আসবো। আম্মাকে চিন্তা করতে না করো।”

নিখোঁজ উদয় ও সাব্বির ভালো বন্ধু ছিল বলেও জানালেন তিনি।

“যাত্রার আগের দিন রাতে ওরা নয় বন্ধু আমার বাসাবোর বাসায় ছিল। আমি খুশি মনেই উদয়কে পরীক্ষার পর বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। বুধবার ওরা ১১ জন বন্ধু কমলাপুর থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ট্রেনে রওনা দেয়। বাকি ২১ জন অন্যপথে সেন্ট মার্টিন যাবে বলে উদয় জানিয়েছিল।”

“আমি কি জানতাম যে এমন একটা ঘটনা ঘটবে,” বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলছিলেন মাহমুদ গাজী।

মাল্টিমোড গ্রুপ অব কোম্পানির অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার পদ থেকে ২০১০ সালে অবসর নেন মাহমুদ উল্লাহ গাজী। তার তিন ছেলের মধ্যে উদয় ছিল বড়। মেজো ছেলে তাওসীদ বিন মাহমুদ ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে আর ছোট ছেলে তাসলিম বিন মাহমুদ পড়েন কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণিতে।

মাহমুদ উল্লাহ গাজী বলেন, “আমরা এখনো ওর অপেক্ষায় আছি। লাশ পেলে গ্রামের বাড়িতে দাফন করবো। তাই ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি।”

উদয়ের মা দিল আফরোজ বেগম কমলাপুল স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা।

ছেলের শোকে গত কয়দিনে একনলা ভাতও মুখে নেননি মা আফরোজ বেগম। কারো সঙ্গে কথাও বলছেন না।

নিঁখোজ সাব্বিরের পরিবার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এই ঘটনা। তরতাজা একটা মানুষ কীভাবে সবার অলক্ষে হারিয়ে যায়- এমন হাজারটা প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের।

সাব্বিরের বাবা অবসরপ্রপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হাসানুর রহমান বলেন, “শুক্রবার মোহাম্মদপুরের স্থানীয় মসজিদে সাব্বিরের জন্য দোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমার ছেলে তো মারা যায়নি। নিখোঁজ রয়েছে। ও মারা যায়নি। কেউ যদি বলে ও মারা গেছে তা ঠিক হবে না।”

‘সাব্বির মারা যায়নি, নিখোঁজ’- হাসানুর রহমানের ভারী কণ্ঠে বলা এ কথাগুলোতে নিংড়ে আসছিল তার ভেতরের আর্তনাদ।

মা সেলিনা আক্তারের শরীরের অবস্থা খুব খারাপ জানিয়ে তিনি বলেন, “বারবার প্রেসার উঠানামা করছে। খাওয়া দাওয়া করতে চাইছেন না। ছেলের ছবি নিয়ে কাঁদছেন, কথা বলছেন কিংবা ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন। এমন পরিস্থিতি আসলে সহ্য করা যায় না।”

এদিকে নিখোঁজ দুই জনের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড সদরদপ্তরের পেটি অফিসার মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিঁখোজদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে। আমাদের এখনো বিশ্বাস আছে ওদের দুজনের সন্ধান পাবো।”