‘যুদ্ধাপরাধের বিচার ঝুলিয়ে রাখতে চায় সরকার’

সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2014, 07:23 PM
Updated : 18 April 2014, 07:23 PM

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারে ‘দীর্ঘসূত্রতার’ প্রতিবাদে শুক্রবার শাহবাগে সমাবেশ করে গণজাগরণ মঞ্চ।

সমাবেশে ইমরান বলেন, “আসলে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঝুলিয়ে রাখতে চায়। বিভিন্নভাবে গোটা বিচার প্রক্রিয়াকেই দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

“আজ খুব দুঃসময়ে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কী হচ্ছে- তা নিয়ে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। সাঈদীর মামলার আপিল ঝুলে আছে। আসামিপক্ষ যেসব তথ্য-প্রমাণ হাজির করেছিল তা ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেয়ার পরও সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে না।”

এদিন একই সময়ে একই স্থানে মুক্তিযুদ্ধ ছাত্র কমান্ডের পাল্টা কর্মসূচি থাকলেও শেষ পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে সমাবেশ করে গণজাগরণ মঞ্চ।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ ছাত্র কমান্ডের সভাপতি কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা একই এলাকায় কাছাকাছি স্থানে অবস্থান নিলেও সমাবেশ করেননি; মিছিল করেন তারা।

এ মাসের শুরুতেই শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা কয়েকটি সংগঠনের নেতারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কর্মীদের সঙ্গে মঞ্চের কয়েক কর্মীর মারামারি ও পাল্টাপাল্টি মামলা হয়।

এরপর ছাত্রলীগসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন সূচনালগ্ন থেকে মঞ্চের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করে আসা ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্নসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আনে।

১২ এপ্রিল ‘গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও সংগঠক’ ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরানকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলে নতুন মুখপাত্রের নাম শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে জানান ইমরান বিরোধীরা ।

অবশ্য এরপরও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট এবং ব্লগারদের একটি অংশ ইমরানের সঙ্গে রয়েছেন।

তাদের নিয়েই ১১ এপ্রিল মঞ্চের পক্ষ থেকে দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা দেন ইমরান, যার মধ্যে শুক্রবারের বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল।      

সমাবেশে ইমরান বলেন, “সম্প্রতি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ট্রাইব্যুনাল ২ এর বিচারপতি অবসরে গিয়েছেন। তাকে যখন নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তখনই আসলে জানা ছিল, তিনি কবে অবসরে যাবেন। কিন্তু তার জায়গায় নতুন বিচারপতি নিয়োগ দিতে সরকার কালক্ষেপন করেছে।

“এছাড়াও আমরা নানা ধরনের আলামত দেখতে পাচ্ছি। একবছর আগে আমরা সরকারকে ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছিলাম। গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করার দাবি জানিয়েছিলাম, সেই দাবি এখনো পুরণ হয়নি।”

ইসলামী ছাত্রশিবিরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা একের পর এক কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “হেফাজতে ইসলাম সরকারের বন্ধু হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছে। আমরা এই ভেবে আতঙ্কিত যে সামনে কি হতে যাচ্ছে!”

তিনি বলেন, “আজকে গণজাগরণ মঞ্চকে নানাভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, গণজাগরণ মঞ্চের আর প্রয়োজন নেই।

“আমরা বলতে চাই, গণজাগরণ মঞ্চ কারো প্রয়োজন মেটানোর জন্য, কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য সৃষ্টি হয়নি। গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি করেছিল জনগণ। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চ লড়াই করবে।”

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির যেন সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি না করতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তারের সঞ্চালনায় সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীর সাহা, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক জিলানী শুভ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক ফয়সাল ফারুক অভিক এবং জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলি সাজু বক্তব্য দেন।

এছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন এবং ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের (বোয়াম) আরিফ জেবতিক ও পারভেজ আলমও বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত মিছিল করে গণজাগরণ মঞ্চ।