‘মারলেও লস, ছাড়লেও লস’

অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত এবি সিদ্দিক সাংবাদিকদের কাছে দুই দিনের বন্দিদশার বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে উঠে এসেছে অপহরণকারীদের সঙ্গে কাটিয়ে আসা প্রায় ৩৫ ঘণ্টার খুঁটিনাটি।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2014, 07:07 PM
Updated : 18 April 2014, 07:07 PM

শুক্রবার বিকাল ৫টায় রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে পাশে নিয়ে কথা বলেন সিদ্দিক।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার নাকের উপর গাড়ো লালচে দাগ দেখা যায়। তার ডান গালও ছিল অনেকটা ফোলা।

সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে রিজওয়ানা জানান, সিদ্দিকের গলা ব্যথা। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে তার।

নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবি সিদ্দিক জানান, বুধবার দুপুরে অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পর হঠাৎ পিছন থেকে একটি মাইক্রোবাস তার গাড়িকে ধাক্কা দেয়।

গাড়ি থেকে নামার পরই ৫/৬ জন যুবক তাকে জোর করে একটি গাড়িতে তুলে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় তার মুখে একটি মুখোশ পরিয়ে দেয়া হয়।

অপহরণকারী প্রত্যেকের উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির বেশি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওদের সবার দেহ সুঠাম।”

সিদ্দিক বলেন, “অপহরণের প্রায় তিন ঘণ্টা পর একটি বাড়িতে আমাকে নেয়া হয়েছিল। তার আগে আমাকে বহনকারী গাড়িটি দুটি ফেরি পার হয়। প্রথম ফেরি পার হবার পর ওরা একটি গাড়ি বদল করেছিল।

“একটি ঘরে দুইজন লোক আমাকে পাহারা দিতো। কয়টা বাজে তাও জানাতো। তাছাড়া আজানের শব্দ শুনে সময় সম্পর্কে ধারণা করতাম।”

বুধবার রাত ১০টার দিকে ওই ঘরে এক ব্যক্তি আসেন, যাকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে অন্যরা। তিনি তার পরিচয় এবং কোথায়-কতো বেতনে কাজ করেন তা জানতে চান বলে জানান সিদ্দিক।

“আমি ওনাকে বলি-আপনাদের টাকার দরকার হলে আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু ‘ভাই’ বলে পরদিন সকালে কথা হবে। ওরা আমাকে পরদিন সকালে নাস্তা করায়, দুপুরে খাওয়ায়।

“পরে রাত রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে আবারো ‘ভাই’ আসে। তিনি বলেন, তোকে তো মেরে ফেললেও আমার লস, যদি ছেড়ে দেই তাও লস। মেরে ফেললে টাকা পাবো না, বাঁচায়ে রাখলে টাকা পাবো। তোকে ছেড়েই দেই।”

এরপর তাকে গাড়িতে করে বের হয় অপহরণকারীরা।

ঘণ্টাখানেক চলার পর চোখ বাঁধা অবস্থায় মিরপুরের আনসার ক্যাম্পের সামনে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে গাড়ি থেকে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়।

“আমার শার্ট ছেঁড়া ছিল, পায়ে স্যান্ডেল ছিল না। তাই একটি রিকসা নিয়ে মিরপুর কাজীপাড়া পর্যন্ত যাই,” বলেন এবি সিদ্দিক।

এরপর কাজীপাড়া থেকে একটি অটোরিকশা নিয়ে সেন্ট্রাল রোডে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন সিদ্দিক। ধানমন্ডি ক্লাবের উল্টো পাশে পুলিশের তল্লাশি চৌকি পড়লে তার অটোরিকশাটি থামানো হয়।

“আমি নিজের পরিচয় দিলে ওরা (পুলিশ) প্রথমে বিশ্বাস করেনি, পরে একজন আমাকে চিনতে পেরে ধানমন্ডি থানায় যোগাযোগ করে।”

অপহরণকারীরা তার ওপর নির্যাতন করেনি বলে জানান এবি সিদ্দিক।

“ওরা আমাকে সেখানে তেমন কোনো খারাপ আচরণ করেনি, কোন টর্চার করেনি।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী সিদ্দিক অপহৃত হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে সোচ্চার হয় বিভিন্ন মানবাধিকার ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।

এদিকে তার পেশাগত কাজে ক্ষিপ্ত হয়ে কেউ তার স্বামীকে অপহরণ করে থাকতে পারে মন্তব্য করে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদেরও তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানান ম্যাগসেসে পুরস্কারজয়ী রিজওয়ানা।

সিদ্দিককে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোর তৎপরতার মধ্যে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর কলাবাগানে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে এসে নিজের পরিচয় দেন তিনি।