‘সিইসির থাকা না থাকা ব্যাপার নয়’

নিজের অনুপস্থিতিতে ভোটে গোলযোগ ও সহিংসতা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের নতুন কিছু করার ছিল না বলে জানালেও সহিংসতার দায় নিতে রাজি নন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2014, 02:24 PM
Updated : 16 April 2014, 04:48 PM

তাই গতানুগতিকভাবেই উপজেলা নির্বাচনে ভোট শেষ করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রায় দেড় মাস বিদেশে ছুটি কাটানোর পর বুধবার কমিশনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের অনুপস্থিতির ‘ব্যাখ্যা’ তুলেন ধরেন সিইসি।

দুই পর্বের ভোটের পর ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক কাজে ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন বলে জানান কাজী রকিব।

তার অনুপস্থিতিতে পরবর্তী তিন পর্বে তুলনামূলভাবে কেন্দ্র দখল, জালভোট, গোলযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ছিল বেশি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমলোচনাও উঠে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “সহিংসতা ও গোলযোগের দায় আমরা কেন নেবো? যারা এসব ঘটনা করে দায় তাদের। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে।”

দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার পর ফের গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হওয়ায় এখনো ভোটারদের মনোভাব পাল্টায়নি বলে মনে করেন কাজী রকিব।

জয় পেতে অদম্য মনোভাবের কারণে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকলেও হবে, না থাকলেও হবে বলে মন্তব্য তার।

৩ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত  নিজের অনুপস্থিতির ব্যাখ্যা  দিয়ে কাজী রকিব বলেন, “আমি অফিসিয়াল কাজ ও ব্যক্তিগত ছুটিতে ছিলাম। এটা সিম্পল জিনিস। এর সঙ্গে বড় কোনো বিষয় ছিল না। আমাকে কারো কাছ থেকে ছুটি নিতে হয় না, আমার ছুটি আমি দেই। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠাচ্ছেন বলেই প্রশ্ন উঠছে।”

তবে রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে সমালোচনা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রয়েছে। সরকারি দল, বিরোধী দল বা নিরপেক্ষ দলই হোক তারা সমালোচনা করতে পারেন। ইসিকে তারা আদরে রাখবেন না। লেজে পা পড়লে তো সমালোচনা করবে।”

ভোটে সহিংসতার জন্য প্রার্থীদের অসহিষ্ণু মনোবৃত্তি, জেতার জন্যে মরিয়া ও সহিংস মনোভাবকে দায়ী করেন তিনি।

“দুই পর্বের পর আমি চলে যাই। এর আগেই সব পরিকল্পনা একসঙ্গে করা হয়েছিল। সুতরাং নতুন কিছু করার ছিল না। গতানুগতিভাবে বাকি নির্বাচনগুলো শেষ করতে হয়েছে,” বলেন সিইসি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন বলে জানান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, “এখান থেকে যেভাবে করেছি, বিদেশ থেকেও একইভাবে ভোট মনিটরিং করেছি। এখানে দূরত্ব কোনো ইম্পর্টেন্ট বিষয় নয়। এটা কিছু মেটার করে না।”

মানুষের মনোবৃত্তির বদল ছাড়া সহিংসতা ঠেকানোর কোনো পথ নেই মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এক্ষেত্রে তার উপস্থিতি-অনুপস্থিতি বড় কোনো বিষয় নয়।

ফাইল ছবি

তিনি বলেন, “আমার অনুপস্থিতিতেও যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে নির্দেশ ছিল। এতটা করার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, তা হবেই। আমি থাকলেও হবে, না থাকলেও হবে।

“আর্মি, পুলিশ, বিজিবি তো মাঠে রয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে এয়ারফোর্সও কিছু করতে পারবে না। মানুষের সহিংস মনোবৃত্তি পাল্টাতে হবে। প্রতিকার ও শাস্তি দিতে হবে, আমরা তা করছি, আইনি সংস্কার আনতে হবে।”

জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় উপজেলা নির্বাচনেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।

ভোটে অনিয়ম রোধে ইসির কার্যকর ব্যবস্থা, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিকার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রেক্ষিতে আগামীতে সহিংসতা কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিইসি।

এবারের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আইনি সংস্কারেরও পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

বেলা ৪টার পর থেকে পৌনে ৫টা পর্যন্ত কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

এসময় ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা ভোটের সময় দেড় মাস অনুপস্থিতির বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

মিডিয়া সেন্টারে ঢুকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে দ্রুত নিজ থেকে বক্তব্য শুরু করে অন্তত ৪৫ মিনিট সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন সিইসি।