রাহাত খান অমিতের মতো অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না সাব্বিরের এই প্রস্থান। আর এই স্ট্যাটাসগুলোর মধ্যে তার স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।
সোমবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন ঢাকার আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র, তাদের একজন সাব্বির।
কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রের বাসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় মা সেলিনা আক্তার শুধু কাঁদছেন।
“আমার ছেলেকে ছবি হতে দেব না, হে আল্লাহ তুমি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও, আল্লাহ আমি তোমার কাছে ছেলের জীবন ভিক্ষা চাই” শুধু বলছিলেন তিনি।
“ভাইয়া বাসায় থাকলে সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করত, গল্প করত। গত রাত থেকে বাসায় কান্নার শব্দ ছাড়া কারো মুখে কোনো কথা নেই,” বলেন বাড়ির গৃহকর্মী শারমিন।
সাব্বিরের বাবা হাসানুর রহমান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। এখন অবসর প্রস্তুতিকালীন (পিআরএল) ছুটিতে রয়েছেন।
মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ১৫১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে হাসানুর ও সেলিনার সংসার।
হাসানুর বলেন, সাব্বির খুব ভালো ছবি তুলতে পারত। দৃক গ্যালারিতে তারা ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল। বিদেশে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নেবার কথা ছিল। মেমোরী মেকারস নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে আলোকচিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজও করত সে।
“একমাত্র ছেলে ছিল ও। ভেবেছিলাম আমার চাকরির পর ও পরিবারের দায়িত্ব নেবে। সবাই মিলে একসঙ্গে বাকিটা জীবন সুখে কাটাব। আহ! কী যে হল,” ভারী হয়ে ওঠে তার কণ্ঠ।
সাব্বিরের ফুফাত ভাই আবদুর রউফ মোহন জানান, সাব্বির সাঁতার জানত না। বন্ধুদের ছবি তুলতে গিয়েই সম্ভবত ভাটার টানে ভেসে গেছে সে।
বাংলা নতুন বছর উদযাপনে সাব্বিররা ৩৪ বন্ধু একসঙ্গে সেন্ট মার্টিন গিয়েছিলেন। এর মধ্যে নয়জন ভেসে গেলে কোস্টগার্ড ও স্থানীয়রা পাঁচজনকে উদ্ধার করে।
উদ্ধার পাঁচজনের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। সাব্বিরসহ বাকি চারজন এখনো নিখোঁজ।
নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধানের ব্যাপারে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের পেটি অফিসার মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নৌবাহিনীর নেতৃত্বে অনুসন্ধান চলছে।
আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শরীফুল আলম জানান, চারজন শিক্ষক সেন্ট মার্টিন গেছেন। আহছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাকও সেখানে রয়েছেন।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা সেন্ট মার্টিনে পৌঁছেছেন।
“স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে আমরা নিঁখোজ শিক্ষার্থীদের সন্ধান পাব বলে আশা করছি।”