‘লাংসিসা-রিও জয় করেননি মুসা’

এভারেস্ট জয় নিয়ে সন্দেহ ওঠার পর মুসা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে এবার পর্বতশৃঙ্গ ‘লাংসিসা-রি’ জয় না করেই সনদ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2014, 03:33 PM
Updated : 31 March 2014, 06:43 PM

মুসার সঙ্গে ওই অভিযানে থাকা মীর শামসুল আলম বাবু এ অভিযোগ তুলেছেন।

সম্প্রতি এভারেস্টজয়ীদের নিয়ে প্রকাশিত নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং নেপাল মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশনা ‘নেপাল পর্বত’-এও মুসা ইব্রাহীমের নাম পাওয়া যায়নি।

এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহীম স্বীকৃতি পেলেও তার কৃতিত্ব নিয়ে বাংলাদেশের অনেকেই সন্দেহ পোষণ করে আসছেন।

এই বিষয়টি নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলার মধ্যেই শনিবার বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তরের এক প্রতিবেদনে ‘নেপাল পর্বত’ এর তালিকায় মুসার নাম না থাকার বিষয়টি প্রকাশিত হয়।

লাং সিসাসহ আরো কয়েকটি পর্বতে আরোহণ না করেও মুসা তাতে ওঠার সনদ নিয়েছেন বলে রোববার খবর প্রচার করে ওই বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন। 

২০০৮ সালের ১ ডিসেম্বর নেপালে লাংসিসা-রি পর্বতশৃঙ্গ জয়ে যান মুসা, বাবুসহ মোট ছয়জন।

শামসুল আলম বাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লাংসিসা-রি অভিযানে ২০ হাজার ৭শ ফুট উপরে ওঠার পর আমাদের গাইড থেম বাহাদুর তামাং জানায় এর ওপরে আর যাওয়া যাবে না।

“কারণ জানতে চাইলে গাইড বলেন- এর উপরে ওঠার জন্য যে ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার ছিল তা আমাদের সঙ্গে নেই।”

গাইডের নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানেই অভিযান শেষ করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

লাং সিসা পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ২১ হাজার ৮১ ফুট।

শামসুল আলম বাবু বলেন, “গাইড ফিরে আসতে বললে মুসা সেখানেই সামিট করার কথা বলেন। কিন্তু আমি এর প্রতিবাদ করলে সে বলে আমরা শুধু ছবি তুলব।”

“নেমে আসার পর সবাই আমাদের অভিনন্দন জানাতে থাকলে আমি মুসার কাছে বিষয়টি জানতে চাই। তখন মুসা জানায় পত্রিকায় নিউজ হয়েছে যে আমরা সামিট করেছি।”

“সামিটের সার্টিফিকেটের জন্য গাইডকে দিয়ে ক্লেইম করাতে হয়। মুসা গাইডকে কনভিন্সড করায়, গাইড বলে আমরা সামিট করেছি। গাইডের সাক্ষ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের তিনজনকে সামিটের সার্টিফিকেট দেয়া হয়, যেখানে লেখা ছিলো আমরা তিনজন ২১ হাজার ৮১ ফিট উপরে উঠেছিলাম।”

ওই সার্টিফিকেট নেননি দাবি করে বাবু বলেন, “দেশে ফেরার পরে এ বিষয়টির বিপক্ষে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখিও করি আমি।”

“এ বিষয়টি আমি পরবর্তীতে নেপাল মাউন্টেনিয়রস ক্লাবের কাছে কয়েকবার মেইল করার পরও সাড়া না পেয়ে হাতে হাতে অভিযোগপত্র পৌঁছে দিই। সেসময় ক্লাবের পক্ষ থেকে গাইড থেম বাহাদুর তামাংকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে স্বীকার করে যে মুসা বলেছিল, সামিটের কথা না বললে কোনো টাকা দেয়া হবে না। এজন্য সে মিথ্যা বলেছিল।”

এছাড়াও ২০০৭ সালের ১৬ মে অন্নপূর্ণা পর্বতমালার চুলু ওয়েস্ট শিখরে ওঠেন বাংলাদেশের মাউন্টেনারস অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাব (বিএমটিসি) এর চার পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহীম, সজল খালেদ, নুর মোহাম্মদ এবং এম এ মুহিত।

একই বছরের ৯ জুন বাংলাদেশে তাদের চারজনকে চুলু ওয়েস্ট জয় করার জন্য সংবর্ধনাও দেয়া হয়।

এ ঘটনার প্রায় এক বছর পরে ২০০৮ সালের অগাস্ট মাসে নর্থ আলপাইন ক্লাবের মাসিক নিউজ লেটার অভিযাত্রীতে ‘বিএমটিসি চুলু ওয়েস্ট জয় করেনি’ শিরোনামের একটি নিবন্ধ লেখেন মুসা ইব্রাহীম।

নিবন্ধে মুসা দাবি করেন, চুলু ওয়েস্টের ওই অভিযানে সামিট না করেই ফিরে আসেন অভিযাত্রী দলটি।

এ বিষয়ে মুসা ইব্রাহিমের বক্তব্য জানতে চাইলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মুসার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন।