‘বাংলাদেশের কাছে শেখার আছে’

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি নারী ও শিশুর ভাগ্যোন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া এসব পদক্ষেপ থেকে তার দেশের ‘অনেক কিছু শেখার আছে’।

সুমন মাহবুব নে পি টো থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2014, 09:52 AM
Updated : 4 March 2014, 12:19 PM

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে মিয়ানমার সফররত শেখ হাসিনা সোমবার দুপুরে প্রথমবারের মতো শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন।

মিয়ানমারের পার্লামেন্টের রুল অব ল’ কমিটির কার্যালয়ে দুই নেতার এই সাক্ষাৎ হয়। দেশটির বিরোধী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির প্রধান সু চি ওই কমিটির চেয়ারম্যান। 

সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নে পি টোতে পৌঁছানোর পর দুপুরে প্রেসিডেন্ট প্যালেসে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি যান মিয়ানমারের পার্লামেন্ট ভবনে।

শেখ হাসিনা রুল অব ল’ কমিটির কার্যালয়ে পৌঁছালে গাড়ি বারান্দায় তাকে আলিঙ্গনে বরণ করে নেন সু চি।

বেগুনি রংয়ের ঐতিহ্যবাহী আনি ও লুঙ্গি পরিহিত সু চি এবং সোনালী কাজ করা সবুজ শাড়িতে শেখ হাসিনাকে এ সময় হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়, পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য, গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাসে যাদের রয়েছে অনেক মিল। 

সু চি এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার কার্যালয়ে নিয়ে যান। শেখ হাসিনা তার বোনের ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকী ববি ও তার স্ত্রী পেপ্পি সিদ্দিকীকে মিয়ানমারের নেত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

এরপর পার্লামেন্টের ওই কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন দুই নেতা। প্রতিবেশী দেশের এই নেত্রীর সঙ্গে শেখ হাসিনার এটিই প্রথম বৈঠক।

 

পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল দুই নেত্রীর বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।

শাকিল বলেন, “আলোচনার শুরুতেই সু চি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, তারা দুজনেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন।”

বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া পদক্ষেপগুলোকে সু চি তার অনুপ্রেরণা হিসাবে দেখছেন বলেও উল্লেখ করেন।

মাহবুবুল হক শাকিল বলেন, “বৈঠকে সু চি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।”

মিয়ানমারের নেত্রী বাংলাদেশের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’, ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’ এবং ‘উপবৃত্তি’ কর্মসূচির প্রশংসা করেন বলেও জানান শাকিল।

গ্রামীণ জনগোষ্ঠির ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, তিনি গ্রামীণ নারীদের সঞ্চয় বাড়াতে উৎসাহিত করতে চান।

জবাবে সু চি বলেন, তিনিও তার নির্বাচনী এলাকায় ‘সেভিং বক্স’ চালু করেছেন। 

বৈঠকে শেষে সু চি আবারো শেখ হাসিনাকে আলিঙ্গন করেন এবং একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। ববি ও তার স্ত্রীও পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন।

আধা ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠকের পর হাতে হাত ধরে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় দুই নেত্রীকে। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন মিয়ানমারের বিরোধী দলের নেতা সু চি।

পরে মিয়ানমারের পার্লামেন্টের স্পিকার শুয়ে মানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল ও মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অনুপ কুমার চাকমা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্দি থাকার পর ২০১০ সালের নভেম্বরে মুক্তি পান সু চি। তার দীর্ঘদিনের কারাবাসকে ১৯৬২ সাল থেকে সামরিক শাসনে থাকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের ‘প্রতীক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।