তসলিমার পাশে মিজানুর

সব নাগরিকের জন্মভূমির আলো-বাতাস পাওয়ার অধিকার থাকলেও লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফেরাতে কোনো উদ্যোগ না থাকায় অসন্তোষ জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2014, 01:03 PM
Updated : 26 Feb 2014, 06:35 PM

বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কমিশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নঃ প্রত্যাশা ও অর্জন’ শিরোনামের এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সমবেতদের উদ্দেশ্যে মিজানুর রহমান বলেন, “তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আপনারা কী করেছেন? কোন অধিকারে একটি রাষ্ট্র তার নাগরিককে দেশে আসার অধিকার দেয় না?”

নিজের জন্মভূমির বাতাস পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকের রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

নারী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার লেখিকা তসলিমা দেশে ফিরতে না পারায় ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, “তসলিমা নাসরিনের মা ও স্বজনের মৃত্যুর পরও সে তাদের শেষবারের মতো দেখতে দেশে আসতে পারেননি।”

“তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন-এটাই কি তার অপরাধ,” প্রশ্ন করেন মিজানুর রহমান।

এ সময় সেখানে উপস্থিত সবাই নীরব থাকেন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন তসলিমা। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি লেখালেখি করতেন। লজ্জা উপন্যাস প্রকাশের পর মৌলবাদীদের হুমকি ও ব্যাপক হৈ চৈয়ের মধ্যে ১৯৯৪ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপর বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া এই লেখিকা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “বাংলাদেশে নারীর অধিকারের জায়গাটা এখনো তন্দ্রাচ্ছন্ন। কারণ মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। এটি মোকাবেলা করা না গেলে নারী আন্দোলন বলে কিছু থাকবে না।”

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মসজিদ ঘিরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মসজিদের ভেতর রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া ইসলামের কাজ নয়। এমনটি হলে তা কারো কাম্য হতে পারে না।”

এ ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন মিজানুর রহমান।

ধর্ম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলে ধর্ম ও রাজনীতি দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক আবেদ খান।

তিনি বলেন, “পুরুষতান্ত্রিক-পিতৃতান্ত্রিক ভাবনাকে আজও আমরা বহন করে চললেও তা পাল্টে দিতে হবে।

“যারা পুরো পৃথিবীটাকে উল্টো পথে পরিচালিত করতে চায় তাদের আক্রমণের শিকার নারী, ধর্ম, শিক্ষা, রাজনীতি। তারা সফল হলে তা মানবতার জন্য ক্ষতিকর।”

ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন আবেদ খান।

“প্রতি শুক্রবার মসজিদে নারীদের বিরুদ্ধে খুতবা দেয়া হয়, শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়- এটা কী ইসলামিক ফাউন্ডেশন কখনো পর্যালোচনা করে দেখেছে,” বলেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “নারী ইস্যুকে এখনো সঠিক জায়গায় নেয়ার পথে বাধা পিতৃতান্ত্রিকতা, সহিংসতা ও মৌলবাদ।

“রাজনীতির বাইরে থেকে নারী আন্দোলনকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সবাই রাজনীতি না করলেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।”

সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের আরো সক্রিয়তা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, “দুর্নীতির বড় শিকার এখন নারী। এটি কমলে নারীদের এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, উপমহাদেশে নারী আন্দোলনের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। শত বাধা উপেক্ষা করে, অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নারীরা তাদের স্বপ্নের জায়গায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে।

এই অগ্রযাত্রাকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে কোন প্রক্রিয়ার দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া দরকার তা নির্ধারণ করার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।

“এ প্রক্রিয়া ঠিক করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে,” বলেন এই নারী নেত্রী।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মাহফুজা খানম, এরোমা দত্ত, নারী নেত্রী রোকেয়া কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।