একুশ ঘিরে শহীদ মিনারে আঘাত

ভাষা শহীদদের স্মরণে পুরো জাতি যখন শ্রদ্ধাবনত, ঠিক সেই সময় নরসিংদী, কুষ্টিয়া, পাবনা ও গাজীপুরে সাতটি শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2014, 04:14 PM
Updated : 21 Feb 2014, 08:36 PM

শুক্রবার সকালে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেয়ার পর গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বেনুপুর বজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার ভেঙেছে দুর্বৃত্তরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একুশের প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নরসিংদী সদরের হাজীপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পাশের বদরপুর পূর্বপাড়া গ্রামে স্থানীয় যুবসংঘের উদ্যোগে এবং বদরপুর এসইএসডিপি মডেল হাই স্কুলে কলাগাছ দিয়ে তৈরি শহীদ মিনার ভাঙা হয়।

তার আগের রাতে ভাঙা হয় কুমারখালী ‘যদুবয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ ও চাটমোহরের হরিপুর ইউনিয়নের ‘বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর দুটি শহীদ মিনার।

এসব ঘটনায় কুমারখালীতে এক জামায়াতকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেখানে একটি স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিও এই হামলার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দায়ী করেছেন।

এসব ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের শহীদ মিনার বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা।

একই ঘটনা ঘটানো হয় বদরপুর এসইএসডিপি মডেল হাইস্কুল ও পূর্বপাড়া গ্রামে স্থানীয় যুবসংঘের উদ্যোগে কলাগাছ দিয়ে তৈরি দুটি শহীদ মিনারের ক্ষেত্রেও।

স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় শুক্রবার সকালে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কলাগাছ দিয়ে বানানো হয়েছিল শহীদ মিনার দুটো।

এদিকে একই এলাকায় পাশাপাশি তিনটি শহীদ মিনার ভেঙে দেয়ায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বদরপুর যুবসংঘের সভাপতি রিফাত ভূইয়া বলেন, “যুবসংঘের সদস্যরা মিলে আমরা শহীদ মিনার তৈরি করে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজিয়েছিলাম। সকালে এসে দেখি সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে।”

হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার স্কুল শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্জনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে তারা বাড়িতে চলে যান। সকালে এসে শহীদ মিনার ভাঙা দেখে তারা হতবাক হয়ে যান।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার খন্দকার মোহিদ উদ্দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “আমরা তদন্ত করে দেখছি। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পেরিয়ে যাওয়ার পর কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারেও ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা।

মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম খান জানান, রাতে দুর্বৃত্তরা স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে শহীদ মিনার ভাংচুর করে পালিয়ে যায়। এতে মিনারের দুই দিকের স্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শুক্রবার সকালে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন সবাই।

এর ঠিক আগের দিন কুমারখালীর ‘যদুবয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ ও পাবনার চাটমোহরের হরিপুর ইউনিয়নের ‘বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এর  শহীদ মিনার রাতের আঁধারে ভেঙে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।

যদুবয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের দায়ী করেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শরিফুল ইসলাম।

কুমারখালী থানার ওসি লুৎফর রহমান বলেন, যদুবয়রা মাধ্যামিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাংচুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় জামায়াতকর্মী শামসুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“তবে মহেন্দ্রপুর বিদ্যালয়ের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

কুমারখালীর যদুবয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার

এদিকে এক দিনের ব্যবধানে একই উপজেলার দুটি শহীদ মিনার ভাংচুরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

তাদের বক্তব্য, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে এসব শহীদ মিনার ভাংচুরের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সকালে বেনুপুর বজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে নবনির্মিত শহীদ মিনারে  ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তারা চলে যাওয়ার পর দুর্বৃত্তরা শহীদ মিনারের তিনটি স্তম্ভ ভেঙে ফেলে ।

 বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, অফিসে ব্যস্ত থাকায় কে বা কারা শহীদ মিনারটি ভেঙে পালিয়ে গেছে তিনি তা বুঝতে পারেননি।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। সে সময় সিলেট, ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়।