আল কায়েদার ‘টেপ’ ছড়ানোর অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার

জিহাদের আহ্বান জানিয়ে ‘আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির ‘অডিও টেপ’ বিভিন্ন ব্লগ ও ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে টাঙ্গাইল থেকে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2014, 06:47 AM
Updated : 18 Feb 2014, 02:08 PM

মো. রাসেল বিন সাত্তার খান নামের ২১ বছর বছর বয়সী ওই যুবক টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের শেষ বর্ষের ছাত্র।

র‌্যাব বলছে, রাসেল একজন ব্লগার। তিনি ‘আমার ভাবনা’ ও ‘আমার দেশ’সহ কয়েকটি উগ্র ইসলামপন্থি ব্লগ চালান।

জামায়াতপন্থী ফেইসবুক পেইজ বাঁশের কেল্লা-২সহ বেশ কয়েকটি পেইজের অ্যাডমিন তিনি। ওয়েব ডেভেলপার হিসাবেও তিনি কাজ করেন।

গ্রেপ্তারের পর ঢাকার উত্তরায় র‌্যাবের প্রধান কার্যালয়ে রাসেল সাংবাদিকদের সামনেই স্বীকার করেন- ‘দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ’ নামের একটি ওয়েবসাইটে জাওয়াহিরির অডিও ক্লিপটি পেয়ে তিনি বিভিন্ন সাইট ও ফেইসবুকে সেটি ‘পোস্ট ও শেয়ার’ করেন। 

অবশ্য আল কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি রাসেল অস্বীকার করেছেন। 

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে টাঙ্গাইলের মাঝিপাড়ায় মিজানুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ ও বেশ কিছু জিহাদি বই।

দুপুরে উত্তরায় র‌্যাব কার‌্যালয়ে রাসেলকে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত বছরের ৩০ নভেম্বর ‘দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইটে জাওয়াহিরির ওই ‘অডিও টেপ’ প্রকাশ করা হয়।

“এই পেইজটি মূলত বালাকোট মিডিয়া নামের একটি সংগঠন পরিচালনা করে। বালাকোট মিডিয়ার পরিবেশনায় দাওয়াহ ইল্লাল্লাহ প্রায় নিয়মিতই বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে জিহাদের ডাক দিয়ে আসছে।”

তিনি জানান, জাওয়াহিরির ওই অডিও ক্লিপ এ বছরের ১৪ জানুয়ারি জিহাদোলজি ডট নেট নামে একটি ওয়েবসাইটে আসে। সম্প্রতি তা ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ক্লিপ কীভাবে ছড়াচ্ছে- তার অনুসন্ধান করতে গিয়েই রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে হাবিবুর রহমান জানান।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রচার করায় ‘তথ্য ও প্রযুক্তি’ আইনে রাসেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

আল কায়েদার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে রাসেল বলেন, “আমি নিজে থেকেই এটি (অডিও ক্লিপ) সংগ্রহ করে প্রচার করেছি। ছোটবেলা থেকেই আমি ইসলাম যেখানে- সেখানে থাকার চেষ্টা করি। ইসলাম সম্পর্কে জানতেই আমি দাওয়া ইল্লালাহর ফলোয়ার হয়েছি।”

তার দাবি, জাওয়াহিরির অডিও ওই সাইটে প্রকাশ করার পর ‘ফলোয়ার’ হিসাবে তিনি লিংক পেয়ে যান। তারপর তিনি তা ফেইসবুকে ও নিজের ব্লগে শেয়ার করেন।

অবশ্য তিনি ওই ক্লিপ ইউটিউবে আপলোড করেননি বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।

 

আল কায়েদার সহযোগী আল ‘আস-সাহাব মিডিয়ার’ তৈরি করা ২৮ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের ওই ক্লিপে জাওয়াহিরি পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তিকে আরবিতে বলতে শোনা যায়, পাশাপাশি ইংরেজি সাবটাইটেলে দেখা যায় তার তর্জমা।

ওই অডিও বার্তায় বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।  

গত বছরের হেফাজতকাণ্ডের সূত্র ধরে রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশ সরকারকে অভিহিত করা হয়েছে ‘ইসলামবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার’ হিসাবে।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের বিচার নিয়েও জঙ্গি সংগঠনটির ক্ষোভ এতে স্পষ্ট হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ফেইসবুকে রাসেলের অনেকগুলো আইডি আছে। তার তৈরি করা বিভিন্ন পেইজের মধ্যে ‘আমার দেশ ভাবনা’, বাঁশের কেল্লা ভার্সন-২’, ‘দৃষ্টিভঙ্গি’, ‘গণতন্ত্র নিপাত যাক’, ‘ব্লগার রাসেল’ অন্যতম।

“এসব পেইজে তিনি বহু রাষ্ট্রবিরোধী আর্টিকেল ও ছবি আপলোড করেন।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটকের পর রাসেলের ইমেইল আইডি খুঁজে দেখা যায়, গত বছরের ৫ মে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের পর ৭ মে ইরানের প্রেসিডেন্টকে একটি মেইল করেন।

‘মাস কিলিং অন প্রোটেস্টস ইন ঢাকা অ্যাট নাইট বাই আর্মড জয়েন্ট ফোর্স, অ্যাট লিস্ট কিলড থাউজেন্ডটস’ শিরোনামে ওই মেইলে ‘বানোয়াট তথ্য ও ছবি’ পাঠানো হয়- যা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলে মন্তব্য করেন হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, “যাবতীয় কর্মকাণ্ড দেখে ধারণা করা যাচ্ছে- রাসেল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম এদেশে প্রচারের সঙ্গেও জড়িত।”

একজন সাংবাদিক রাসেলের রাজনৈতিক বিশ্বাস জানতে চাইলেও তিনি কিছু বলার আগেই ‘সংবাদ সম্মেলন শেষ’ জানিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, রাসেল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কি না- সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য তারা এখনো পাননি।

ওই বার্তার কণ্ঠ জাওয়াহিরির কি-না র‌্যাব তা খতিয়ে দেখছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

গত শনিবার গণমাধ্যমে ওই বার্তার খবর প্রকাশের পরদিন রোববার জাতীয় সংসদে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান একাধিক সাংসদ। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আল কায়েদার ‘দোসর’ বলেও আখ্যায়িত করেন ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদ।

সন্ত্রাসবাদী এই সংগঠনের বার্তার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো গোষ্ঠী সম্পৃক্ত কি না তা খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

সোমবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, আল কায়েদার অডিও বার্তাটি কোথা থেকে প্রচার করা হয়েছে- সরকার তা জানতে পেরেছে।

জঙ্গি সংগঠনটির এই তৎপরতা নিয়ে তিনি বলেন, “আগে যে ফেসিলিটিজ তারা (আল কায়েদা) পেত, তা এখন পায় না বলেই হুমকি দিচ্ছে। কারা সুবিধা দিত সে বিষয়ে বলছি না।

“আগে তাদের (আল কায়েদা) একটা পলিসি ছিল। আমরা তোমাদের এখানে আসব-থাকব তবে তোমাদের ক্ষতি করব না। এখন আর সে পলিসি নেই।”

তবে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার প্রস্তুত বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা।