‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের মুখোশ খুলে দিয়েছে শাহবাগ’

গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক আবেদ খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2014, 05:03 PM
Updated : 7 Feb 2014, 06:08 PM

শাহবাগে ধারাবাহিক আন্দোলনের বর্ষপূতির তিন দিনব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণের সমাবেশে বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, শিল্পী, মানবাধিকার ও সাংস্কৃতিককর্মীরা।

আবেদ খান বলেন, “গণজাগরণ মঞ্চ দেখিয়েছে বাংলাদেশ শুধু কতিপয় বুদ্ধিজীবী, কতিপয় রাজনীতিক ও কতিপয় মানুষের নয়, এটা তরুণ প্রজন্মের বাংলাদেশ। এদেশের গণতন্ত্রকামী, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষের এবং যারা জামায়াত-শিবিরের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন তাদের সকলে এ মঞ্চকে তাদের হৃদয়ে ধারণ করেন।

“আমাদের আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। মুখোশের আড়ালে থেকে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী চেতনাকে লালন করে তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।”

বিএনপির মতো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আমরা চাই না- মন্তব্য করে এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সেই শক্তিকে চাই যারা জয়বাংলাকে বুকে ধারণ করবে এবং জাতির জনকে বিশ্বাস ও আস্থা রাখবে।”

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার বলেন, স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির এতো প্রভাব ছিল না। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় তাদের কর্মকাণ্ড ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

“আমরা দেখেছি নতুন প্রজন্ম দেশ পরিবর্তনের লক্ষ্যে সমস্ত জায়গায় জেগে উঠেছে। তারা দেশকে সত্যিকারের গর্বিত দেশে পরিণত করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি তারা তা করতে পারবে। কোনো বাধাই তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।”

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “এক বছরের আন্দোলনে বর্ষপূর্তিই শুধু আমাদের উদযাপনের মূল লক্ষ্য ছিল না, ছিল আন্দোলনে হারানো সহযোদ্ধাদের স্মরণ ও ছয় দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতা।”

গত এক বছরের মতো মানুষের প্রত্যাশাকে ধারণ করে ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবি পূরণে গণজাগরণ মঞ্চ সফল হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের মামলা অচিরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, একাত্তরের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তরুণ প্রজন্ম যে সংগ্রাম করছে তাতে সাধারণ জনগণের বিপুল সমর্থন রয়েছে।

“যতদিন পর্যন্ত সমস্ত রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার না হবে এবং জামায়াত-শিবির বিতাড়িত না হবে ততদিন এ আন্দোলন জারি থাকবে।”

শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, “কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের পর যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের সদস্যরা হতাশার যন্ত্রণায় ঘরে বসে কেঁদেছি, তখন তরুণ প্রজন্ম ফাঁসির দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। তারা দেশের সকল মানুষের হৃদয়ে চেতনার আলো জ্বালিয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি মাহফুজা খানম বলেন, “তোমরা ভেঙ্গেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমাদের হবে জয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই হোক তরুণ প্রজন্মের লক্ষ্য।”

মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতির খেলা চলবে না-এ দাবি নিয়ে প্রথমে রাস্তায় নামলেও পরবর্তীতে শাহবাগ সাহসিকতার সঙ্গে নিজস্ব চিন্তা ও দাবি তুলে ধরার জায়গায় পরিণত হয়েছে।

বর্ষপূর্তির আয়োজনের তৃতীয় দিনের কর্মসূচিতে শুক্রবার সকালে শাহবাগে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৩টায় শাহবাগের মূল মঞ্চ থেকে সমবেত কণ্ঠে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবিরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দাবিতে মঞ্চের পরিচিত সব স্লোগান দেয়া হয়।

বিকেল ৪টার দিকে শুরু হয় জাগরণ সমাবেশ। রাতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে তিনদিনের কর্মসূচি শেষ হয়।

সমাবেশে গত বছরে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরেন ইমরান এইচ সরকার।

তিনি জানান, শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী আরো সাতদিন চলবে।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি শামসুল ইসলাম সুমন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু প্রমুখ বক্তব্য দেন।