ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র জালিয়াতির অভিযোগ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2014, 04:18 PM
Updated : 26 Jan 2014, 07:21 AM

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভর্তি কমিটির এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুযোগ না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের এক কর্মকর্তা ভর্তি পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্রের উত্তরপত্র অংশে বেশকিছু রদবদল করেছেন, যাতে ফলাফলে অন্তত ৩০ নম্বরের ব্যবধান দেখা যাচ্ছে।

এর ফলে অনেক অযোগ্য প্রার্থীও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

তবে এর মধ্যে ওই কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ‘কনভিন্স’ করে ফেলেছে বলে তার ধারণা।

ভর্তি কমিটির ওই সদস্য বলেন, “কিছু কিছু উত্তরপত্রে ৩০-৪০ নম্বরের ব্যবধান দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ইংরেজির ক্ষেত্রে। হয়তো কেউ ৪ পেয়েছিলো কিন্তু পরে দেখা যায় ২০ পেয়েছে।”

আগামীকাল রোববার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভর্তি কমিটির ওই সদস্য বলেন, “সাধারণত দুটি ভাগে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তথ্য কম্পিউটারে সংগ্রহ করা হয়। এবছর ভর্তি পরীক্ষার পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের যোগসাজশে এ ধরনের একটি জালিয়াতি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অনেক অযোগ্য পরীক্ষার্থীও ভর্তির সুযোগ পাবে।”

তিনি বলেন, “ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর শীটে দুটি অংশ থাকে একটি উত্তরপত্র অংশ এবং আরেকটি পরীক্ষার্থীর তথ্য (এসআইএফ) অংশ। এর মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র অংশটিতে কোনো ধরনের সংশোধনের সুযোগ নেই।”

তবে কোনো পরীক্ষার্থী যদি তার তথ্য লিখতে ভুল করে তাহলে তা অনেক সময় সংশোধন করা হয় বলেও জানান তিনি।

ওই সদস্য আরো অভিযোগ করেন, “এবছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগে দুটি অংশ স্ক্যান করা হলে এতে প্রচুর অসঙ্গতি পাওয়া যায়।”

ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি এড়াতে গত কয়েকবছর ধরে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে তথ্যগুলো সংগ্রহ করার কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

“এবছর বুয়েটের ইন্সটিটিউট অব ইনফরফেশন অ্যান্ড কম্পিউটার টেকনোলজির (আইআইএসটি) এই দায়িত্ব ছিল। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করার পরে একটি সিডি তৈরি করে। পরবর্তীতে গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের তথ্যগুলো ঠিক আছে কিনা তা নিরীক্ষা করা হয়। এসময়ই মূল সমস্যাটি ঘটে।”

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তিনটি বিভাগে- বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের রসায়ন, পদার্থ আবশ্যিকভাবে এবং জীববিজ্ঞান অথবা গণিতের মধ্যে যে কোনো একটিতে অংশ নিতে হয়।

মানবিক বিভাগের জন্য ইংরেজি, বাংলা এবং সাধারণ জ্ঞান আবশ্যিক এবং মানবিকের ১২টি বিষয়ের মধ্যে যে কোনো চারটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। অন্যদিকে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাণিজ্যের সবগুলো বিষয়েই অংশ নিতে হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে এ বছর অনলাইনে ফরম সংগ্রহ করেছে ৪ লাখ ২৬ হাজার এবং ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪ লাখ ১৩ হাজার জন।

ওই কর্মকর্তার হিসেবে প্রায় দেড় হাজার উত্তরপত্রে রদবদল করা হয়েছে। আর এজন্য তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের পরিচালক মমিনুল ইসলামকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, “এ কাজে মমিনুলের সাথে কিছু ছাত্রনেতাও জড়িত। এ চক্রটি অনেক শক্তিশালী। আমরা বিষয়টি ধরতে পারার পরে যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালাম ততক্ষণে এই চক্রটি প্রশাসনকেও ‘কনভিন্স’ করে ফেলে।”

এবিষয়ে জানতে বুয়েটের আইআইসিটির সহকারী অধ্যাপক শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়। এবিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

এবিষয়ে ভর্তি কমিটির প্রধানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের প্রধান মমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কল কেটে দেন তিনি।

পরে আবার চেষ্টা করলেও ফোন ধরেননি মমিনুল।