ইনকিলাবের ছাপাখানা বন্ধ, বার্তা সম্পাদকসহ গ্রেপ্তার ৩

রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন রোডে দৈনিক ইনকিলাব কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে ছাপাখানা সিলগালা করার পাশাপাশি বার্তা সম্পাদকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2014, 04:08 PM
Updated : 16 Jan 2014, 06:57 PM

সাতক্ষীরায় যৌথ অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী সহায়তা করছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর এই অভিযান শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ।

সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বার্তা সম্পাদকসহ চারজনকে আটক, ছাপাখানা সিলগালা এবং কম্পিউটার জব্দ করে পুলিশ চলে যায় বলে সংবাদপত্রটির বিশেষ প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ইনকিলাবে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের এক ভাষ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতির খবরটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

এরপর পুলিশ বাদি হয়ে ওয়ারী থানায় একটি মামলা করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী বলে চিহ্নিত মাওলানা আবদুল মান্নান (প্রয়াত) প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকার কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।

মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে করা ওই মামলার ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন।

পুলিশ কার্যালয় থেকে বার্তা সম্পাদক রবিউল্লাহ রবি, উপপ্রধান প্রতিবেদক রফিক মোহাম্মদ, কূটনৈতিক প্রতিবেদক আহমেদ আতিক, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আফজাল বারীকে আটক করে।

পরে আফজাল বারীকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাতি তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

পুলিশের করা ওই মামলায় এই পত্রিকার সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, প্রকাশক, প্রধান বার্তা সম্পাদক ও এক প্রতিবেদককে আসামি করা হয়েছে।

বাদশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের প্রেস এবং ফটো বিভাগ পুলিশ সিলগালা করে দিয়েছে। কাল আমাদের পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে না। আমরা কাল সকালে সবাই বসে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।”

তবে ছাপাখানা সিলগালা করা হয়নি দাবি করে পুলিশ বলেছে, ছাপাখানার কিছু যন্ত্রপাতি আনা হয়েছিল, তা আফজাল বারীর জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং সংযুক্ত দণ্ডবিধির ধারায় ওয়ারী থানায় বৃহস্পতিবার ওই থানার উপ পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলাটি হয়।

পুলিশের অনলাইন সংবাদ পোর্টাল ‘ডিএমপি নিউজ’ এ দেখা যায়, ইনকিলাবের ওয়েবসাইট ও ছাপানো কপিতে ‘সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর অপারেশনে ভারতীয় বাহিনীর সহায়তা’ শিরোনামে এক সংবাদ প্রকাশিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সাতক্ষীরায় গণআন্দোলন দমাতে সরকার ভারতীয় বাহিনীকে অপারেশনে নামিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লির কাছে এ সেনা সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয়।”

মাসুদুর রহমান বলেন, “এই খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিভ্রান্তিকর।

“এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রচারের ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরম ভাবে ক্ষুণ্ন হয়। একইভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।”

তাই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ইনকিলাব পত্রিকার কার্যালয়ে গোয়েন্দা পুলিশ তল্লাসি অভিযান চালায়, বলেন তিনি।

বিএনপির প্রতিবাদ

দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ ও সাংবাদিক গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘সংবাদপত্রের ওপর চরম নির্যাতন’ বলে এর নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নিন্দা জানান।   

তিনি বলেন, “নিজেদের অপকর্ম ঢাকা দিতে এবং ক্ষমতায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করার দুর্বিনীত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ প্রকাশের অপরাধে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ছাপাখানা সিলগালা এবং বার্তা সম্পাদকসহ পেশাদার সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

অবিলম্বে ইনকিলাব পত্রিকার ছাপাখানা খুলে দিয়ে গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানান ফখরুল। একই সঙ্গে অন্যান্য বন্ধ গণমাধ্যমও খুলে দেয়ার দাবিও জানান তিনি।