বিচারপতি হাবিবুর রহমান আর নেই

সাবেক প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2014, 05:02 PM
Updated : 12 Jan 2014, 07:41 AM

হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় শনিবার রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

ইউনাইটেড হাসপাতালে কর্তব্যরত ব্যবস্থাপক মতিয়ার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত সাড়ে ৯টার দিকে উনাকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়। এখানে নিয়ে আসার আগেই সম্ভবত তার মৃত্যু হয়েছিল। রাত ৯টা ৫৩ মিনিটে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়।”

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন শোক জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে জাতি একজন দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ বিচারিক বুদ্ধিসম্পন্ন বিচারক ও রবীন্দ্র অনুরাগী জ্ঞানী ব্যক্তিকে হারাল।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় হাবিবুর রহমানের অসামান্য অবদান আগামী দিনের বাংলাদেশ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা।

এক শোক বার্তায় খালেদা জিয়া বলেন, “তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন সৎ, বিচক্ষণ, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও দেশপ্রেমিক এক মহান ব্যক্তিকে হারিয়েছে।”

তার শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয় বলেও মনে করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

১৯৯৫ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন হাবিবুর রহমান। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হিসেবে তিনি ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তার অধীনে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
 

১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে ১৯৪৯ সালে বি.এ. সম্মান ও ১৯৫১ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও তার ভূমিকা ছিল।

সাবেক এই বিচারপতি সমাজ, রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিষয়ে নিয়মিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে কলাম ও নিবন্ধ লিখতেন।

গবেষণাধর্মী অনেক গ্রন্থ রয়েছে তার।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে যথাশব্দ (১৯৭৪), বাংলাদেশের তারিখ, কোরানসূত্র, মাতৃভাষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৩), বচন ও প্রবচন (১৯৮৫), বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক (১৯৯৬), কোরান শরীফ : সরল বঙ্গানুবাদ (২০০০)।

মননশীল লেখার জন্য বাংলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার পান তিনি।

হাবিবুর রহমানের স্ত্রী ও তিন মেয়ে রয়েছেন। বড় মেয়ে রুবাবা রহমান দেশেই আছেন। অন্য দুই মেয়ে নুশরাত ও রওনাত রহমান যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিচারপতি হাবিবুর রহমানের দাফন হবে। তবে কোথায় তাকে দাফন করা হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

“উনার দুই মেয়ে বিদেশে আছেন। কালকের মধ্যে তারা দেশে ফিরবেন। সোমবার জোহরের নামাজের পর সুপ্রিম কোর্টে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে দাফন করা হবে।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিচারপতি হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “দেশের বিচার ব্যবস্থায় তার অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবেও সাহসী দায়িত্ব পালনের জন্য জাতি তার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।”