রাজশাহীতে পুলিশের ট্রাকে ছোড়া বোমায় কনস্টেবল নিহত

রাজশাহীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশের ট্রাকে ছোড়া হাতবোমায় নিহত হয়েছেন এক কনস্টেবল।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2013, 03:46 PM
Updated : 27 Dec 2013, 09:57 AM

গ্রেপ্তার-হয়রানির প্রতিবাদে ১৮ দলের ওই মিছিল থেকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের রাজাহাতা লোকনাথ স্কুলের পাশের মোড়ে পুলিশের ট্রাকে বোমা ছোড়া হয়।

ওই বোমা বিস্ফোরণে নয়জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এর মধ্যে কনস্টেবল সিদ্ধার্থ চন্দ্র সরকারকে ঢাকায় পাঠানোর পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার ওসি জিয়াউর রহমান।

১৮ দলের সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা পুলিশের ওপর হামলার হুমকি দেয়ার পর এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

ওসি জিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “১৮ দলের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে ফেরার পথে পুলিশের টহল ট্রাকে বোমা মেরে পালিয়ে যায়। বোমাটি ট্রাকের ভিতরে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে আমাদের নয়জন আহত হন।”

এর মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয় সিদ্ধার্থকে। সেখানে রাতে তার মৃত্যু হয়।

সিদ্ধার্থের স্ত্রী দীপ্তি সরকার পুলিশ কনস্টেবল। তিনিও রাজশাহীতে কর্মরত। সিদ্ধার্থ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বিমল সরকারের ছেলে।

বোমাহামলায় আহতদের মধ্যে কনস্টেবল আনন্দ, তহিদ, শাহরিয়ার, মজিদ, রায়হান, রাফি, সোহেল ও আসাদকে ভর্তি করা হয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাদের মধ্যে আনন্দ, তহিদের অবস্থা গুরুতর বলে জানান ওসি।

ঘটনার সময় একই ট্রাকে থাকা কনস্টেবল আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার (এসি) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে দুটি গাড়িতে টহল চলছিল। সামনের গাড়িতে সহকারী কমিশনারসহ ১০ জন এবং অন্য ট্রাকে ১৪ জন ছিলেন।

“কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে ওই পথ দিয়েই ফিরছিল। ট্রাক দুটি হেতেম খাঁ মোড় হয়ে মালোপাড়ার দিকে যাওয়ার সময় রাজাহাতা লোকনাথ স্কুলের পাশের মোড়ে একটি শক্তিশালী হাতবোমা ছোড়ে মিছিলকারীরা।”

বোমাটি ট্রাকের ভেতরে কনস্টেবল সিদ্ধার্থের বুলেটরোধী জ্যাকেটের ওপর পড়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। তবে ট্রাকের ভেতরের দিকে থাকায় অক্ষত থেকে যান আলমগীর।

ওসি জানান, মিছিল করার আগে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা নগরীর ভুবনমোহন পার্কে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ ১৮ দলের নেতারা বক্তৃতা করেন।

ওই সমাবেশে মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাইনুল ইসলাম পুলিশের ওপর হামলার হুমকি দেন বলে জানান তিনি।

“তিনি পুলিশের উদ্দেশে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর ঢাকামুখী ‘গণতন্ত্র অভিযাত্রায়’ বাধা দেয়া হলে পুলিশকে প্রতিহত করা হবে। ১৮ দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলে মোড়ে মোড়ে গণ বিস্ফোরণ ঘটবে।”

রাজশাহীতে ১৮ দলের মিছিল।

রাজশাহীতে বোমাহামলায় নিহত কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকার।

তার ওই বক্তব্যের আধা ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয় বলে জানান ওসি।

এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া মিছিল-সমাবেশে শুরুর আগে রাজশাহী কলেজের সামনে, রাজাহাতা মোড়, ঘোষপাড়া মোড় ও সোনাদিঘী মনিচত্বর থেকে ২৯ জনকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ওসি জিয়া জানান।

এ হামলার আগে রাজশাহীতে পুলিশের উপর কয়েকদফা হামলা হয়।

গত ৩১ মার্চ নগরীর রাণীনগর এলাকায় বোমা হামলায় এক এসআইয়ের দুই হাতের কব্জি উড়ে যায়। পরদিন শালবাগান এলাকায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে এক এসআইয়ের মাথা থেতলে দেয়।

এছাড়া গত ২ ডিসেম্বর কোর্ট স্টেশন মোড়ে পুলিশের একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং গুলিতে এক পুলিশ আহত হন।

১০ ডিসেম্বর বিনোদপুরে পিটিয়ে এক ওসির পা ভেঙে দেয়াসহ ছয় পুলিশে জখম করে।