যুদ্ধজাহাজ ‘সমুদ্র জয়’ এখন নৌবহরে

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হলো ‘বানৌজা সমুদ্র জয়’সহ চারটি যুদ্ধজাহাজ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2013, 12:05 PM
Updated : 23 Dec 2013, 12:23 PM

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের নেভাল বার্থে নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় এই যুদ্ধ জাহাজের অধিনায়কের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

একইসঙ্গে দেশে নির্মিত আধুনিক যুদ্ধজাহাজ বিএনএস অপরাজেয়, বিএনএস অদম্য ও বিএনএস অতন্দ্র এর আনুষ্ঠানিক কমিশনিং করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করা বিএনএস সমুদ্র জয়ের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নৌবহরে সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল বিএনএস বঙ্গবন্ধু।

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির প্রেক্ষিতে বর্ধিত সমুদ্র এলাকার ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে এ জাহাজের নাম ‘সমুদ্র জয়’ রাখা হয়েছে।

খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত অপর তিনটি জাহাজ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে দেশের মোট পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হল।

২০১১ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত ‘পদ্মা’ ও ‘সুরমা’ নামে অপর যুদ্ধজাহাজ দুটির কমিশনিং করেন।    

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।

নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ দ্রুত চলছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, শক্তিশালী নৌবহর গঠনের উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক দুটি করবেট চীনে নির্মাণাধীন, যা ২০১৫ সালে বহরে যুক্ত হবে।

চীন থেকে আরো দুটি মিসাইল ফ্রিগেট আগামী বছরের জানুয়ারিতে সংযুক্ত বলে বলেও রাষ্ট্রপতি জানান।

কমিশনিং অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবীব ছাড়াও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সেনা ও বিমানবাহিনী প্রধান ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে নেভাল একাডেমিতে কমিশনপ্রাপ্ত মিড শিপম্যান ও ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারদের কমিশন প্রদান অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

নতুন ও পুরনো ক্যাডেটদের একটি সুসজ্জিত দল কুচকাওয়াজে অংশ নেন। এসময় রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে ২০১২ ব্যাচের ৪৪ জন মিড শিপম্যান এবং ২০১৩ ব্যাচের ১৫ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারকে কমিশন প্রদান করা হয়।

৪৪ জন মিড শিপমেন্টের মধ্যে আট জন ফিলিস্তিনি, একজন মালদ্বীপ ও একজন শ্রীলঙ্কানও রয়েছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, নৌবাহিনী চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ড্যান্ট রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আখতার হাবিব এবং নেভাল একাডেমির কমান্ড্যান্ট কমডোর এম নাজমুল হাসান।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০১২ সালে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমিমাংসিত সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়েছে। এ কাজে সমুদ্রের সামগ্রিক জরিপ ও তথ্য সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

“সরকারের সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। একইভাবে ২০১৪ সালে ভারতের সাথে অমিমাংসিত সমুদ্রসীমা চূড়ান্ত হবে এবং তাও আমাদের পক্ষেই আসবে বলে আশা করি।”

নতুন কমিশনপ্রাপ্ত সদস্যদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকের এই সাফল্যের পতাকা বহনের দায়িত্ব তোমাদের হাতে তুলে দেয়া হল।

“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অর্জিত সাফল্যের চলমান ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তোমাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ নৌবাহিনী উত্তরোত্তর উন্নতি করবে এবং উপকৃত হবে সমগ্র দেশ ও জাতি।”

নৌবাহিনী সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কারো সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয় বরং আত্মমর্যাদাশীল জাতির সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের আত্মরক্ষার সামর্থ্য থাকা দরকার।

একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর স্বপ্ন পূরণ এখন সময়ের ব্যাপার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতিমধ্যে নৌবহরে দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট এবং দুটি হেলিকপ্টার যুক্ত হয়েছে। শীঘ্রই ঘাঁটি সুবিধাসহ নৌবহরে যুক্ত হবে দুটি সাবমেরিন।