একই বাড়িতে ৬ জনকে খুন

রাজধানীর গোপীবাগে একই বাড়িতে ছয় জনকে জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

গোলাম মুজতবা ধ্রুবকামাল হোসেন তালুকদার, শেখ আবদুল্লাহ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2013, 02:05 PM
Updated : 21 Dec 2013, 06:28 PM

গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বরে চার তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ওই ভবনের আশেপাশের বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই বাসা থেকে চিৎকারের শব্দ আসতে থাকে। এর পরই মানুষজন এগিয়ে যায়।

ছয় খুনের খবরে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে।  

ওয়ারি জোনের উপ-কমিশনার ইলিয়াস শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সন্ধ্যায় ওই ছয় জনের জবাই করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই।”

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ওই ভবনের পাশের ভবনের দোতলার বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাশের ফ্লাট থেকে চিৎকার শুনতে পেয়ে আমি দৌড়ে যাই। পরে গিয়ে দেখি দরজার সামনে দুটি লাশ পড়ে আছে। একটি বয়স্ক লোকের এবং অপরজনের বয়স অনেকটা কম।”

বয়য়স্ক লোকটির নাম লুৎফুর রহমান ফারুক (৬০)। কিছুদিন আগে তারা বাসাটিতে উঠেছিলেন বলেও জানান তিনি।

ওয়ারি জোনের সহকারী কমিশনার মো. শাহেদ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নিহত ছয় জনের মধ্যে লুৎফর রহমান নিজেকে পীর বলে পরিচয় দিতেন।

নিহত অন্যরা হলো- পীরের ছেলে মনির হোসেন, বাড়ির কেয়ারটেকার মঞ্জু, পীরের মুরিদ শাহিন, রাসেল ও মুজিবুর রহমান। লুৎফরের ছেলে মনির হোসেন সিটি ব্যাংকের সদরঘাট শাখায় কর্মরত ছিলেন বলে তার স্বজনরা জানিয়েছেন।

ওয়ারি বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মেহেদী হাসান সংবাদিকদের জানান, এই বাসার দুইটি কক্ষ থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষ থেকে দুটি এবং অন্য কক্ষ থেকে চারটি লাশ পাওয়া যায়। প্রত্যেকের মুখে স্কচটেপ ও হাত-পা বাঁধা ছিল।

তিনি জানান, লুৎফর রহমানের স্ত্রীসহ অন্য সদস্যদের বাসার আরেকটি কক্ষে আটকে রেখে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। পীরের অনুসারী সেজে ভেতরে ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে বাসা থেকে কিছু লুট হয়েছে কি না তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের সদস্যরা জানাতে পারেননি বলেও জানান মেহেদী হাসান।
এদিকে ঘটনার পরপরই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছুটে যান। বর্তমানে সেখানে সিআইডির ক্রাইমসিনের সদস্যরা ঘটনাস্থল আলামত সংগ্রহ করছে। 

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, নিহত লুৎফর রহমান ফারুকের স্ত্রী জানিয়েছেন তার স্বামী ইমাম মেহেদির মতাদর্শী বিশ্বাসী ছিলেন। এই মতাদর্শ প্রচারের জন্য এক থেকে দেড় বছর আগে একবার তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

“ফারুক সন্ধ্যার পর বাসায় বাড়তি ১০ জনের খাবার বন্দোবস্ত করতে বলেন। সন্ধ্যার দিকে ১০/১২ এসে মুড়ি/চানাচুর খায়, নামাজ পড়ে। তারপর বলে লুৎফর রহমানকে বলে- আমরা আপনাদের হত্যা করতে এসেছি।”

এরপর লুৎফরের স্ত্রী, ছেলে বউ ও দুই শিশুসহ সাতজনকে পাশের কক্ষে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে কক্ষ তালাবন্ধ করে দেয়।

জিয়াউল বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তার কাছে যারা আসতো তারাই তাকে হত্যা করে থাকতে পারে।”

পুলিশের ওয়ারি জোনের ডিসি ইলিয়াস শরীফ বলেন, “হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে এই বাসায় আসার পর একজন মহিলার সঙ্গে আমাদের দেখা হয়। তিনি নিজেকে লুৎফর রহমানের মুরিদ বলেছেন।

“ওই মহিলা বলেন, কয়েক বছর আগে হজে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন ইমাম মেহেদি বাংলাদেশে আছেন এবং দেশে ফিরে তিনি বুঝতে পারেন লুৎফর রহমানই ইমাম মেহেদি। এরপর তিনি তার মুরিদ হন।”

বাড়ির মালিক শিরিন জানান, তার স্বামী ওয়ালিউল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব। পরিবার নিয়ে তারা অন্যত্র থাকেন। এই বাসা দেখাশোনা করেন সাইফুল নামে তাদের এক কর্মচারী।

ঘটনার সময় সাইফুল বাড়িতে ছিলেন না বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, লুৎফর রহমানের মতাদর্শবিরোধীরাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। খুব শিগগির জড়িতদের সনাক্ত করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ইলিয়াস শরীফ।