রাজনীতিবিদদের সতর্ক করল আদালত

দেশ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত পুরান ঢাকার দরজি দোকানি বিশ্বজিৎ দাশ হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে রাজনীতিবিদদের সতর্ক করে ‘সংযমী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2013, 11:20 AM
Updated : 18 Dec 2013, 11:34 AM

বিচারক বলেন, “কারণ রাজনৈতিক হরতাল, অবরোধ, শোভাযাত্রা যদি বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হয়, তবে নিকট ভবিষ্যতে হয়তো বিশ্বজিৎ দাসের মতো আরো মৃত্যু আমাদের দেখতে হবে। যা শান্তিপ্রিয় দেশপ্রেমিক কোনো মানুষের কাম্য হতে পরে না।”

বুধবার ঘটনার এক বছর ১০ দিনের মাথায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে যে রায় ঘোষণা করেন তাতে আট জনকে ফাঁসি ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়।

দণ্ডাদেশ পাওয়া ২১ আসামির সবাই আদালতপাড়া সংলগ্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৩ জন এখনো পলাতক।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে একটি মিছিল থেকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়।

এ বি এম নিজামুল হক জনাকীর্ণ আদালতে রায় ঘোষণার সময় বলেন, “বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড অন্য দশটি হত্যাকাণ্ডের মতো নয়, এ হত্যাকাণ্ড বিভিন্ন দিক থেকে ব্যতিক্রমী ও স্পর্শকাতর।”

“এ হত্যাকাণ্ড রাতের অন্ধকারে বা গোপনে করা হয়নি, বরং প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরি, চাপাতি, লোহার রড লাঠি দিয়ে তাকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।”

মানবতা ও নৈতিকতার কোনো স্তরেই নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি বা রক্তপাত সমর্থনযোগ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বস্তুত ওই অপরাধের নিষ্ঠুরতা এমন মর্মান্তিক ছিল যা বর্হির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও প্রচার হয়েছে; মানুষ হয়েছে হতবাক এবং আতঙ্কিত।”

আসামিরাও রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বাভাবিক ও সহনীয় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে বহির্বিশ্ব ও দেশের মানুষের কাছে ভুল বার্তা দেয়ার প্রয়াস চালিয়েছেন বলেও পর্যবেক্সণে বলা হয়।

বিচারক বলেন, “সামগ্রিকভাবে অপরাধের মাত্রা ও গভীরতা বিবেচনা করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করলে ন্যায়বিচার সমুন্নত হবে বলে এ ট্রাইব্যুনাল মনে করে।”

“বিশ্বজিতের বাবা অনন্ত চন্দ্র দাস পুত্রশোকে কাতর হয়ে আহাজারি করে ন্যায়বিচারের যে প্রত্যাশা করেছেন সেটিও দালিলিক বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত হয়েছে। যদিও পুত্রশোকের বেদনা আমৃত্যু তাকে তাড়া করবে।”

রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল অবরোধের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নামধারী এই ছাত্ররা রক্তাক্ত জখম করার কারণেই পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে।

রায়ে এই বিষয়টি উল্লেখ করে বিচারক এ বি এম নিজামুল হক বলেন, “কাজেই এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল অবরোধের ক্ষেত্রে আহ্বানকারী পক্ষ ও বিরোধীপক্ষকে গণতন্ত্র রক্ষা ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখার জন্য গভীর সতর্কতা অবলম্বন করে মানুষের জীবন বিপন্ন, জন সাধারণের শান্তিভঙ্গ বা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা, সম্পত্তির ক্ষতিসাধন থেকে মুক্তি দিতে হবে।”

বিরোধীদলের ডাকা গত কয়েকটি অবরোধে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় ৭৫ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যাদের মধ্যে অবরোধ সমর্থক এবং বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মী রয়েছেন। কোথাও কোথাও প্রাণ হারিয়েছেন সাধারণ মানুষও।