ফাঁসি যেখানে আটকেছিল, সেখান থেকেই শুরু

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রক্রিয়া যেখানে আটকেছিল, সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে সেখান থেকেই আবার শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মাঈন উদ্দিন খন্দকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2013, 10:16 AM
Updated : 12 Dec 2013, 12:24 PM

‘রিভিউ’ আবেদন খারিজের আদেশ হাতে পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে ‘রিভিউ’ খারিজের আদেশে বিচারকরা সই করেন এবং বিকাল পৌনে ৪টার দিকে তার অনুলিপি কারা কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলাম জানান।

মাঈন উদ্দিন খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মঙ্গলবার আমরা আদালতের একটি আদেশের কপি পেয়ে ফাঁসি স্থগিত করেছিলাম। আজ আপিল বিভাগের নতুন আদেশের কপি পেয়েছি।

“সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে যেখানে থেমেছিলাম, সেখান থেকেই কাজ শুরু করব।”

একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মামলার বিচারিক আদালত, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ৮ ডিসেম্বর রায় বাস্তবায়নে কাদের মোল্লার ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ জারি করায় নতুন করে আর কোনো পরোয়ানা জারির প্রয়োজন পড়বে না।

নিয়ম অনুযায়ী আসামি কাদের মোল্লা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করার সুযোগ পেলেও তিনি তা করতে রাজি হননি বলে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

তবে কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেননি বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।

বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের খারিজের আদেশের পর তিনি বলেন, “পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সরকারকে যা কিছু করতে হয় তা আইন ও জেল কোড মেনেই করবেন।… জেল কোড না মেনে কেউ কিছু করতে পারবে না।”

আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর তৎকালীন আইনমন্ত্রী ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা শফিক আহমেদ বলেছিলেন, এই ধরনের অপরাধে বিশ্বের কোথাও অপরাধী সাধারণত ক্ষমা পান না।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বৃহস্পতিবার বলেন, “প্রাণভিক্ষার কথা অনেক আগে থেকেই বলা হয়েছে। (কাদের মোল্লা) কোনো রেসপন্স করেননি। এখন কোনো সুযোগ নেই। উনি চাইলে আলাদা কথা।”

৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেয়।

এর আড়াই মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। দুই পৃষ্ঠার একটি পরোয়ানা খামে করে এবং লাল কাপড়ে মোড়ানো ৭৯০ পৃষ্ঠার নথিসহ রায়ের কপি গত ৮ ডিসেম্বর পৌঁছে দেয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।  

এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু জানান, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার আগে সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এরপর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ফরমান আলী ওইদিন রাত ৮টার সময় সাংবাদিকদের জানান, ১২টা ১ মিনিটে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হবে। 

কিন্তু আসামিপক্ষের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ রাতে এক আকস্মিক আদেশে তা স্থগিত করে দেন।

বুধ ও বৃহস্পতিবার আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে তা নাকচ করে দেয় আপিল বিভাগ।