যুদ্ধাপরাধীর জন্য জাতিসংঘ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি

যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার নাভি পিল্লাই, তার এই চিঠি পাঠানোর মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী নেতার ফাঁসি বুধবার সকাল পর্যন্ত স্থগিত রাখতে আদালতের আদেশ হয়েছে।

লাবলু আনসারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2013, 08:17 PM
Updated : 10 Dec 2013, 08:59 PM

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর ঢাকায় অবস্থানের মধ্যে মঙ্গলবার কাদের মোল্লার জন্য শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠানোর তথ্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে।

একাত্তরে খুন-ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত কাদের মোল্লাকে মঙ্গলবার ফাঁসিতে ঝোলানো হবে বলে তার দল জামায়াতে ইসলামীর আশঙ্কা প্রকাশের মধ্যে সোমবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন দুই বিশেষজ্ঞ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।

কাদের মোল্লা ন্যায়বিচার পাননি অভিযোগ তুলে গাব্রিয়েলা নাউল ও ক্রিস্টফ হেইন্সের বিবৃতি দেয়ার এক দিনের মাথায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের ‘শেষ মুহূর্তের আহ্বান’ এল, যাতে তিনি কাদের মোল্লাকে একজন রাজনীতিক হিসেবে উল্লেখ করে তাকে এখনি ফাঁসিতে না ঝোলানোর অনুরোধ করেছেন।

এদিন কারা কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও কাদের মোল্লার আইনজীবীদের আবেদনে এর কার্যকারিতা বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিতের আদেশে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এরপর কারা কর্তৃপক্ষও তাদের তৎপরতায় ক্ষান্ত দেয়।

একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’খ্যাত কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তবে নাভি পিল্লাই মনে করছেন, জামায়াত নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার এই বিচারে আন্তর্জাতিক ‘মান’ বজায় ছিল না। সেই সঙ্গে মুত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ না থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

কাদের মোল্লাকে তার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে নির্মমতার সাক্ষীরাসহ সারাদেশ থেকে ওই রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ওঠার প্রেক্ষাপটে এর বিরুদ্ধে আপিল করে প্রসিকিউশন, আপিল করেন কাদের মোল্লা নিজেও।

ওই আপিলের রায়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনায় আবেদন জানানোর সুযোগ দেশের সাধারণ নাগরিকদের থাকলেও গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের সেই সুযোগ সংবিধানে রহিত করা হয়েছে; যদিও কাদের মোল্লার আইনজীবীরা এই সুযোগ দাবি করছেন।

জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি পশ্চিমা বিভিন্ন দেশভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের এই বিচারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের এই বিচারের আন্তর্জাতিক মান পুরোপুরি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং অন্য অনেক দেশে না থাকলেও এই ট্রাইব্যুনালে আসামির জন্যও আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন এক মাস আগেও একই ধরনের এক বিজ্ঞপ্তিতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এর কোনো মামলায় মৃত্যুদণ্ড না দিতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল।

বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতিসংঘ যে কোনো মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে, সেটা যে পরিস্থিতিতে হোক না কেন, এমনকি সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে হলেও।”

মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনও একই কথা বলে আসছিল, যাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধীদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা। এক্ষেত্রে ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে ১২জন নাৎসির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কথা বলছেন তারা।