জাফর ইকবালের পদত্যাগ নিয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ কম: মন্ত্রী

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করার পর নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন, তারা সব কিছু ‘সুন্দর’ করার চেষ্টা করবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2013, 02:44 PM
Updated : 26 Nov 2013, 02:44 PM

আর বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান মনে করছেন,  অধ্যাপক জাফর ইকবালের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ হবে।

শাহজালাল ও যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পদত্যাগপত্র জমা দেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমীন হক।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। আমরা খবর নিচ্ছি।”

‘পদত্যাগ ঠেকাত হস্তক্ষেপের সুযোগ কম’ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তবে চেষ্টা করব যেন সবকিছু সুন্দরভাবে করা যায়।”

আগামী ৩০ নভেম্বর অভিন্ন প্রশ্নপত্রে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু সিলেটের ‘বিভিন্ন শ্র্রেণি-পেশার মানুষ’ ব্যানারে একটি পক্ষের বিরোধিতার মুখে মঙ্গলবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

এর পরপরই পদত্যাগপত্র দেন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের’ প্রতিনিধিত্ব করে আসা জাফর ও ইয়সমিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক মোহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের পর তাদের বক্তব্য নিয়ে আজ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হয়েছে। সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

১৯৯৪ সাল থেকে সিলেটের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে আসা জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এক খোলা চিঠিতে বলেন, “আমরা পুরোপুরি অবিশ্বাস ও বিস্ময় নিয়ে আবিস্কার করলাম, বামপন্থী ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে এর বিরোধিতার সূচনা করল এবং স্বাভাবিকভাবে সেটি অন্যরা গ্রহণ করল।”

“মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যখন এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন- তখন আমাদের মনে হয়েছে, আমাদের সবকিছু নতুন করে ভেবে দেখার সময় হয়েছে।”

পদত্যাগপত্র জমা দিলেও অধ্যাপক জাফর ইকবাল বিষয়টি ‘রিকনসিডার’ (পুনর্বিবেচনা) করবেন বলে আশা করছেন মঞ্জুরি কমিশনের চেয়াম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তিনি (জাফর ইকবাল) অভিজ্ঞ শিক্ষক, গবেষক এবং লেখক। তিনি চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।”

পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি এখনো ‘বিস্তারিত’ জানেন না উল্লেখ করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, “এখানে আমার হস্তক্ষেপের সুযোগ খুব কম, দেখা যাক...।”

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে অধ্যাপক আজাদ বলেন, “এখন সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল বাতিল করলেও আগে তারাই তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা আমাদের স্বজন, যাদের পাশে নিয়ে এতোদিন কাজ করে এসেছি, তারা যদি আমাদের পাশে না থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে অবশ্যই এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের বিদায় নেয়ার সময় হয়েছে।”