জাফর ইকবাল ও ইয়াসমীন হকের পদত্যাগপত্র

শাহজালাল ও যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়সমীন হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2013, 12:29 PM
Updated : 26 Nov 2013, 12:29 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স স্কুলের ডিন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়সমীন হক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।”

জনপ্রিয় লেখক জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।  

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে লেখা এক খোলা চিঠিতে পদত্যাগের বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা সবসময়ই আমাদের সবকিছুর বিরোধিতা করে, আমরা তাদের বিরোধিতার বিরুদ্ধে এতোদিন কাজ করে এসেছি। কিন্তু যারা আমাদের স্বজন, যাদেরকে পাশে নিয়ে কাজ করে এসেছি, তারা যদি আমাদের পাশে না থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে অবশ্যই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের বিদায় নেয়ার সময় হয়েছে।”

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত পরীক্ষার পক্ষে যুক্তি দিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, এতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বকীয়তা পুরোপুরি বজায় রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারত। পার্থক্য বলতে, শুধু পরীক্ষা হতো এক প্রশ্নে। এতে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের ভোগান্তিও কমতো। 

১৯৯৪ সাল থেকে সিলেটের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে আসা জাফর ইকবাল বলেন, “আমরা পুরোপুরি অবিশ্বাস ও বিস্ময় নিয়ে আবিস্কার করলাম, বামপন্থী ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে এর বিরোধিতার সূচনা করল এবং স্বাভাবিকভাবে সেটি অন্যরা গ্রহণ করল।

“মাননীয় অর্থমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যখন এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন- তখন আমাদের মনে হয়েছে, আমাদের সবকিছু নতুন করে ভেবে দেখার সময় হয়েছে।”

তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।  তবে হাজারখানেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়েছেন দুই শিক্ষকের সিদ্ধান্ত বদলানোর দাবি জানাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষকও উপাচার্য আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করে এর বিহিত করার দাবি জানান।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাফর স্যার না থাকলে আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, তারাও পদত্যাগ করব।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, তাদের পদত্যাগ ঠেকাত ‘হস্তক্ষেপের সুযোগ কম’।

“তবে চেষ্টা করব, যেন সবকিছু সুন্দরভাবে করা যায়।”

দুই শিক্ষক পদত্যাগপত্র দেয়ার ঘণ্টা দুই আগে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক মোহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন।

আগামী ৩০ নভেম্বর অভিন্ন প্রশ্নপত্রে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।

নিবন্ধক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের পর তাদের বক্তব্য নিয়ে আজ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা হয়েছে। সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ পরে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা হলেও উপাচার্য একক সিদ্ধান্তে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করেন। ওই সভা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি নিয়ে এবার প্রথমবারের মতো এক প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শাহজালাল ও যশোর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে গত আড়াই মাস ধরে প্রস্তুতিও নেয়া হয়।

কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই সিলেটে সমন্বিত পরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বলা হয়, একসঙ্গে পরীক্ষা হলে সিলেটের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবে।

ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল,  কেবল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ৪৩ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী। আর যশোরের জন্য ৫ হাজার ৮২৫ জন শিক্ষার্থী।

আর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তির আবেদন করেছে- এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা  ৫ হাজার ৬১৩ জন।

এদের মধ্যে ৬ হাজার ৮১৮ জন যশোর কেন্দ্রে বসে শাহজালালে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চান। আর সিলেট কেন্দ্রে বসে যশোরের জন্য পরীক্ষা দিতে আগ্রহী ৩ হাজার ২০৩ জন শিক্ষার্থী। 

ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সমন্বিত এই ব্যবস্থায় কোনো এলাকার শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার কারণ নেই। কেবল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবেই এ উদ্যোগ।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাখায় সন্তুষ্ট না হয়ে ভর্তি পরীক্ষা প্রতিহতের ঘোষণা দেয় ‘সিলেটবাসী’ নামে আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি সিলেটের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটাও দাবি করে তারা।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে দেখা করে তারা স্মারকলিপিও দেন। এরপর মঙ্গলবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক থেকে ভর্তি স্থগিতের ঘোষণা আসে।