খালাফ হত্যা: ৫ আসামির মধ্যে একজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলী হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির মধ্যে একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমতি দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2013, 06:36 AM
Updated : 18 Nov 2013, 05:37 PM

বাকি তিনজনকে যাবজ্জীবন এবং পলাতক এক আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আবেদন এবং আসামিদের আপিল শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ সোমবার এই রায় দেন।

গত বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা শুরু হয়। তিন কার্যদিবসে এই রায় ঘোষণা শেষ হয়।

রায়ে আপিল খারিজ করে আসামি সাইফুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমতি দেয় হাই কোর্ট। সাইফুল বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

খালাস দেয়া হয়েছে পলাতক আসামি সেলিম চৌধুরীকে, যার পক্ষে রাষ্ট্রের নিয়োগ করা আইনজীবী হাই কোর্টে শুনানি করেছিলেন।

আর বিচারিক আদালতে ফাঁসির আদেশ পাওয়া মো. আল আমীন, আকবর আলী লালু ও রফিকুল ইসলামের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তারাও কারাগারে রয়েছেন।

রায়ে বলা হয়, অভিযুক্তরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডাকাতি করতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের জন্য এরা সবাই দায়ী।

আল আমিন আর খোকনের স্বীকারোক্তি অনুসারে দেখা যায়, পয়েন্ট ২২ বোরের রিভলবার দিয়ে সাইফুল ফায়ার করে। এতে তিনি আহত হয়ে পরে মারা যান।

হাই কোর্টের রায়ের পর আপিল বিভাগে স্পেশাল লিভ পিটিশন না করলে এই রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান জেল কোডে রয়েছে।

তবে তার আগে আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবেন। আপিল বিভাগে আবেদন করার পর তা খারিজ হলেও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ থাকবে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোরশেদুল আলম বলেন, “সেলিমের বিরুদ্ধে তেমন কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় তাকে খালাস দিয়েছে আদালত।”

আসামি সাইফুল ইসলাম ও  আকবর আলী লালুর আইনজীবী খবীর উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

আপিল করা হবে কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন অন্য দুই আসামি মো. আল আমীন ও রফিকুল ইসলামের আইনজীবী আমিনুর রশিদ রাজু।

দণ্ড বাড়ানো বা খালসপ্রাপ্তের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

হাই কোর্টের রায়ের পর আপিল বিভাগে স্পেশাল লিভ পিটিশন না দিলে এই রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান রয়েছে। তবে তার আগে আসামিরা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পান।

গতবছরের ৫ মার্চ মধ্যরাতে গুলশানে নিজের বাসার কাছে গুলিবিদ্ধ হন সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ আল আলী (৪৫)। পরদিন ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর পুলিশ গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করে। আর সাড়ে চার মাস পর চারজনকে গ্রেপ্তার করে, যাদের পরিচয় দেয়া হয় ‘ছিনতাইকারী’ হিসাবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. ওবায়দুল হক গত ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়ার পর ৩১ অক্টোবর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

মামলার বিচারে আসামি আল আমীন বিচারকের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, সাইফুলসহ বাকি চারজন ওই রাতে খালাফকে ঘিরে ধরেন এবং তার কাছে ডলার চান।

“ডলার না দেয়ায় তাদের মধ্যে ধস্তাধাস্তি হয়। পরে সাইফুল তার হাতে থাকা রিভলবার দিয়ে খালাফকে গুলি করে পালিয়ে যান।”

তদন্ত কর্মকর্তা এ কথাগুলো অভিযোগপত্রেও উল্লেখ করেন। তবে গ্রেপ্তার চার আসামি পরে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় মোট ৩৩ জন সাক্ষ্য দেন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারিক আদালত গত ৩০ ডিসেম্বর পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। 

রায়ের পর আসামিরা হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেন।  অন্য দিকে কারা কর্তৃপক্ষ নিযম অনুযায়ী দণ্ড কার্যকর করতে হাই কোর্টের অনুমতি চায়।

১ অগাস্ট হাই কোর্ট এ বিষয়ে শুনানি শুরুর পর গত ৩ নভেম্বর তা শেষ হয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. খোরশেদুল ইসলাম।

আর কারাগারে থাকা চার আসামির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খবীর উদ্দিন ভূঁইয়া ও আমিনুর রশিদ রাজু। পলাতক আসামি সেলিম চৌধুরীর পক্ষে আদালত নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মাহমুদা খাতুন।

হাই কোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাইফুলের বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলার মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত আব্দুল মোতালেব হাওলাদার।

ফারুক ঘরামীর ছেলে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি আল আমিনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার হাজিখালী গ্রামে। আকবর আলী লালুর বাড়ি শরিয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার গোয়ালকোয়া গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুল জলিল।

রফিকুল ইসলাম খোকনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি থানার নাটকঘর বাইলেনে। তার পিতার নাম আব্দুস সালাম।

খালাসপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সেলিমের বাড়ি ভোলা জেলার শশীভূষণ থানার উত্তর চরমঙ্গলে। তার পিতার নাম সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী।