‘সর্বদলীয়’ সরকারের শপথ সোমবার

দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার শপথ নিতে যাচ্ছে ‘সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা’, আগামী মধ্য জানুয়ারিতে নির্বাচনের সময় তারাই ক্ষমতায় থাকবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2013, 02:04 PM
Updated : 18 Nov 2013, 06:18 AM

নির্বাচনকালীন ‘ছোট আকারের’ এই মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়টি রোববার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে চূড়ান্ত হয়। সাংবাদিকদের কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূইঞা।

তিনি বলেছন,‘সর্বদলীয়’ সরকারের কাঠামো ও কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি তা স্বাগতও জানিয়েছেন।

“এই মন্ত্রিসভা হবে বর্তমানের চেয়ে আকারে ছোট,” বলেন মোশাররফ হোসেন।

নির্বাচনকালীন এই সরকারের বিষয়ে আর কিছু বলেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বিএনপির আপত্তির মধ্যে প্রস্তাবিত এই সর্বদলীয় সরকারের প্রধানের দায়িত্বে শেখ হাসিনা থাকবেন কি না, তা রোববার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি।

একটি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, যদি বিএনপি ‘সর্বদলীয়’ মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়, তাহলে সরকার প্রধানের পদ শেখ হাসিনা জ্যেষ্ঠ কোনো নেতার হাতে ছেড়েও দিতে পারেন।

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা

‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, শান্তি চাই’- গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার এই বক্তব্যও যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী।

‘সর্বদলীয়’ এই সরকারে বিএনপির যোগ দেয়ার সম্ভাবনা যে একেবারেই বাদ দেয়ার নয়, তার ইঙ্গিত মেলে শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে, যেখানে ‘নির্দলীয়’ এর বদলে ‘নির্বাচনকালীন’ সরকার নিয়ে আলোচনার ওপর জোর দেন তিনি।    

রোববার যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের পর বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরীও বলেন, “বিএনপি চায়, সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সঙ্কটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান। যার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে দেশে প্রতিযোগিতামূলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

রোববার দুপুরে অর্থপাচার মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের খালাস পাওয়ার পর দুই দলের সমঝোতার বিষয়ে জনমনে বিশ্বাস দৃঢ় করে।

দিনভর জল্পনাতে যে প্রত্যাশার সলতে জ্বলেছিল, রাত সাড়ে ১১টার দিকে এক বক্তব্যে তা নিভিয়ে দেন বিএনপির মুখপাত্র ফখরুল।

‘সর্বদলীয়’ সরকারে বিএনপির যোগ দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে এই উদ্যোগকে ‘তামাশা’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। 

মন্ত্রিসভার শপথের সময় ঠিক হওয়ার পর থেকে গুঞ্জন চললেও গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গভীর রাত পর্যন্ত থাকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক জানিয়েছেন, মন্ত্রিপরিষদ থেকে কোনো ফোন বিএনপির কোনো নেতা পাননি।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত হওয়ার পর  নির্বাচনকালে নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় থাকার কথা থাকলেও বিরোধী দলের আপত্তির মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দেশে এই প্রথম এই ধরনের সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন।

‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠনের লক্ষ্যে গত সপ্তাহে বর্তমান মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্রও জমা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ঠিক সাতদিন পর শপথ অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। 

৩৪৫ আসনের সংসদে জামায়াতে ইসলামীসহ যে আটটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, তার অন্তত চারটিকে নিয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে ‘সর্বদলীয়’ এই মন্ত্রিসভা।  

নির্বাচনকালীন এই সরকারে শপথ নিতে কারা সোমবার বিকালে বঙ্গভবনে যাচ্ছেন, সে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। এর মধ্যেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কয়েকজনের আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে, যারা শপথ নিতে পারেন।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নির্বাচনকালীন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

আমু ও তোফায়েল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দলে সংস্কারের দাবি তুলে সমালোচনার মুখে পড়েন। শেখ হাসিনার বিগত সরকারের মন্ত্রী থাকলেও এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি তাদের।

সরকারের চার বছরের মাথায় তোফায়েলকে মন্ত্রী করতে চাইলেও তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। গত বছরতোফায়েলের সঙ্গে মহাজোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেননকেও মন্ত্রিসভায় শপথের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সরকারে যোগ দেননি তিনি।

নতুন করে যারা শপথ নেবেন, তাদের সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যও নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবেন। এর মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু থাকছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছে।

জাতীয় পার্টি থেকে এইচ এম এরশাদের স্ত্রী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন এরশাদ,সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নু, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার নির্বাচনকালীন সরকারে আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তার দলের চেয়ারম্যান এরশাদের সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সংসদে সরব চুন্নু সাবেক উপমন্ত্রী। রুহুল আমিন হাওলাদার বরিশালের সংসদ সদস্য।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ চট্টগ্রামে গিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করে সংগঠনটির ১৩ দফা দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ‘সর্বদলীয়’ সরকারের শপথ নেয়ার সময় জানানো হয়।

‘সর্বদলীয়’ সরকারে জাতীয় পার্টির থাকা-না থাকা নির্ভর করছে এরশাদের সিদ্ধান্তের ওপর, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ক্ষণে ক্ষণে বদলের নজির যার আছে।

এরশাদ একদিন আগেই বলেছেন, তার দল আর মহাজোটে নেই এবং সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন তিনি।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন,তিনি মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে কী করবেন, সে বিষয়ে দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

“আমি ফোন পেয়েছি। আমাকে ৩টায় বঙ্গভবনে যেতে বলা হয়েছে। তবে আমি কনফিউজড।”

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,তিনি এসবের কিছুই জানেন না। 

রাতে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

অন্যদিকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “আমি সাতজনের (সর্বদলীয় সরকারে) নাম শুনেছি।”