তিস্তা চুক্তির আহ্বান গবেষণা সংস্থা এসএফজির

শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ বাড়াতে যৌথ বিনিয়োগ পরিকল্পনারও পরামর্শ দিয়েছে স্ট্রাটেজিক ফোরসাইট গ্রুপ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2013, 09:31 AM
Updated : 13 Nov 2013, 09:44 AM

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের আহ্বান জানিয়েছে ভারতভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্রাটেজিক ফোরসাইট গ্রুপ-এসএফজি।

বার্তা সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এসএফজির একটি প্রতিবেদনে দুই দেশের পানির ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তির কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা অববাহিকায় পানির প্রবাহ বাড়াতে যৌথ বিনিয়োগে প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন পুনর্গঠনের ওপরও জোর দিয়েছে তারা।

বৈশ্বিক নিরাপত্তা, পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ ও পানি নিয়ে বিরোধ মীমাংসা নিরসনে কাজ করা গবেষণা সংস্থা স্ট্র্যাটেজিক ফোরসাইট গ্রুপের মতে, তাদের এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে তা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ২৫ কোটি মানুষের জন্য নতুন করে আশা দেখাবে।

‘শান্তির নদী: ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় দেশে নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তার ছায়া পড়লেও দুই দেশ যে শান্তির নীতিতে চলছে তার আলোকে তিস্তা চুক্তিসহ অন্যান্য বিরোধ মীমাংসার এখনই উপযুক্ত সময়।

এসএফজির সভাপতি ড. সন্দীপ ওয়াশলেকর বলেন,“তিস্তার পানি প্রবাহ নিয়ে দুই দেশের বক্তব্যে যে ফারাক সেটা ১০ বিলিয়ন কিউবিক মিটারের (বিসিএম) বেশি হবে না। আর এ পরিমাণ তো বছরে ভারত থেকে বাংলাদেশে যে পানি আসে তার মাত্র এক শতাংশ। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় এই চুক্তি আটকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ২৫ কোটি মানুষের অগ্রগতি পথ বন্ধ করা অন্যায়।”

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইলমাস ফুটেহ্যালি বলেন, “তিস্তা চুক্তি সই হলেই তিস্তা অববাহিকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বাড়াতে যৌথ পরিকল্পনার দ্বার খুলে যাবে। এক্ষেত্রে গ্রীষ্ম মৌসুমে বন্যার পানি জমিয়ে তা শুষ্ক মৌসুমে ছেড়ে দিয়ে খরা থেকে শস্যকে রক্ষা করা যাবে, যাতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল ও বাংলাদেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির উন্নতি হবে।”

তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি ও যৌথ বিনিয়োগ পরিকল্পনার পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।  

ড. ওয়াসলেকর বলেন, “বিদ্যমান যৌথ নদী কমিশন আদতে যৌথ বা কমিশনের কোনোটাই নয়। এখানে দুটি সমান্তরাল জাতীয় কমিটি রয়েছে যারা আন্তঃসীমান্ত নদী ব্যবস্থাপনায় নিজ দেশের অবস্থান নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত।”

“আমাদের একটি যথাযথ যৌথ প্রতিষ্ঠান দরকার, যেখানে পর্যায়ক্রমে উভয়দেশ থেকে আসা একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতার অধীনে দুই দেশেরই টেকনিক্যাল কর্মকর্তারা থাকবেন। বন্ধুসুলভ ও সহযোগিতাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অভিন্ন সব নদীর টেকসই ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে তারা কাজ করবেন।”

দীর্ঘ দিন ধরে পরিবেশ, আইনি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রভাবের ওপর গবেষণার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে এসএফজি। গত জুলাইয়ে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ গোলটেবিল বৈঠকে উভয়দেশের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি এ প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা-পর্যালোচনা হয়।

উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

এসএফজির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি চলতি সপ্তাহে ঢাকা সফর করছেন। সরকার ও বিরোধী দল ছাড়াও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। নয়া দিল্লি ও কলকাতায়ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তারা।

২০০২ সালে মুম্বাইয়ে যাত্রা শুরুর পর চার মহাদেশের ৫০টি দেশে পররাষ্ট্র নীতিনির্ধারণ বিষয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে ভারতীয় এই সংস্থার।

তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি করতে উদ্যোগী ভারত সরকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে কাগজে-কলমে আসছে না বহু প্রতীক্ষিত এ চুক্তি।