হরতালকারীদের ‘মূল নেতাকে’ আইনের আওতায় আনার দাবি

হরতাল আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলের মূল নেতাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এক সংসদ সদস্য।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2013, 03:23 PM
Updated : 10 Nov 2013, 05:17 PM

বিরোধী দলের চলমান হরতালের কঠোর সমালোচনা করে শিগগিরই এ বিষয়ে আইন প্রণয়নেরও দাবি জানিয়েছেন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা। 

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা ৮৪ ঘন্টার হরতালের প্রথম দিন রোববার জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও জাসদের মইনুদ্দিন খান বাদল।

আলোচনার শুরুতে চুন্নু বলেন, দেশের কেউ হরতাল সমর্থন করে না, হরতাল কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও নয়। বিরোধী দলের টানা হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতি স্থবির হতে বসেছে।

“সরকারি দলের সদস্যরা শুধু হরতালের বিরুদ্ধে মুখে বলেন। কিছু করেন না। দ্রুত আইন প্রণয়ন করতে হবে। অহেতুক হরতাল নিয়ে সময় নষ্ট করবেন না।”

হরতাল ডাকলেই সংশ্লিষ্ট দলের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখার দাবি জানান এই সাংসদ।

চুন্নু বলেন, “যে হরতাল ডাকবে সেই দল ক্ষতিপূরণ দেবে। তা না হলে দলের নেতার সম্পত্তি ক্রোক করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।”

মইনুদ্দিন খান বাদল বলেন, এখন ‘নামকাওয়াস্তে হরতালের বিরুদ্ধে’ সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে।

“যারা বোমা বানায়, বোমা মারে- জনগণ তাদের চামড়া তুলে ফেলবে। হরতালের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনগণ পথে নেমে পড়ছে।”

এই সংসদ শেষ হওয়ার আগেই ‘হরতালবিরোধী আইন’ করার দাবি জানান কামাল আহমেদ মজুমদার।

“যদি হরতালে ক্ষতিসাধন করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দলের মূল নেতাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই দলের মূল নেতাসহ যারা নির্দেশ দিয়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিৎ।”

এর আগে গত বৃহস্পতিবারও হরতাল নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়।

ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেদিন ভারতের কলকাতা হাই কোর্ট ও অন্ধ্র প্রদেশ হাই কোর্টের জারিমানার আদেশের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশেও হরতাল নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সেদিন জানান, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য হরতালকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন আইন প্রণয়নের ‘চিন্তা’ করছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দুই সপ্তাহে তিন দিন করে ছয় দিন হরতালের পর গত শুক্রবার বিকালে আরো ৭২ ঘণ্টার হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ওই রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার ও রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী সামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গ্রেপ্তার হলে বুধবারও হরতাল ডাকে বিএনপি।

রোববার সংসদ অধিবেশনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিএনপির জ্যেষ্ঠ সাংসদ মওদুদ ও এম কে আনোয়ারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি সংসদে পড়ে শোনান।

‘যে দলেরই হোক, সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার’

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ বিধি অনুযায়ী দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের জন্যই গত ২ নভেম্বর তার নির্বাচনী এলাকা পাবনার সাঁথিয়ায় পরিকল্পিতভাবে হিন্দু বসতিতে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়।

“সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক, তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”

গত ২ নভেম্বর সাঁথিয়ার বনগ্রাম সাহাপাড়ার দশম শ্রেণির ছাত্র রাজীব সাহার (১৭) ফেইসবুক পাতায় নবীকে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লেণ ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।

পরদিন রাজীব সাহার বাড়িসহ স্থানীয় হিন্দুদের অন্তত ৩৫টি বাড়ি, তিনটি মন্দির ও ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এতে আতঙ্কিত হিন্দুরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যা।

ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে।