‘অপারেশন ডালভাতে বিডিআর নেয়া ঠিক হয়নি’

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘অপারেশন ডালভাত’ এর মতো অর্থসংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরকে জড়ানো ঠিক হয়নি বলে পিলখানা হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে আদালত।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2013, 07:14 AM
Updated : 5 Nov 2013, 02:28 PM

বিচারক বলেছেন, “২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনার পেছনে অর্থনৈতিক মোটিভ ছিল। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মোটিভও থাকতে পারে।”

এই বিদ্রোহের তথ্য আগে জানতে না পারার ঘটনায় ‘গোয়েন্দা দুর্বলতা’ ছিল বলেও মনে করছে আদালত।

বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেয়, যাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বিডিআরকে।

ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আখতারুজ্জামান মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৩৩ মিনিটে ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে বহু আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেন।

শুরুতেই আদালত বসতে দেরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন বিচারক।

তিনি বলেন, “এই আদালতই শেষ আদালত নয়। আপিল বিভাগ পর্যন্ত আছে। এই মামলার রায় কারো পক্ষে যাবে কারো বিপক্ষে যাবে।”

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস করার মোটিভ নিয়ে এই বিদ্রোহের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের দেশকে ছোট করা, বিদেশি বিনিয়োগ না আসার জন্য কলকাঠি নাড়ানো হয়েছে।

অর্থনৈতিক কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, দেশে গণ্ডগোল থাকলে বাহিনীর মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতা থাকবে। এতে বিনিয়োগ হবে না। অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড দুর্বল করার জন্য হতে পারে। সামাজিক কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে নিরুত্সাহিত করার জন্য।

বিডিআর সদস্যদের প্রচার করা লিফলেটে অভিযোগ করা হয়েছে- ডেপুটেশনে আসা সেনা কর্মকর্তারা গাড়িবাড়ি পান।

এ বিষয়ে বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, এটা তারা যোগ্যতার ভিত্তিতে পেয়ে থাকেন। তবে সুশৃঙ্খল বাহিনীকে ডাল ভাত কর্মসূচির মতো একটি কাজে যুক্ত করা ঠিক হয়নি। এটা বাহিনীর ঐতিহ্যকে নষ্ট করেছে।

তিনি বলেন, এই বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। ফলে অনেকেই এদের ট্রেড ইউনিয়নের মতো ব্যবহার করে থাকে।

নিজ প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই আবাসনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন বিচারক।

জাতিসংঘে একবার বিডিআর সদস্যদের পাঠানো হয় উল্লেখ করে বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেন, পরে আর না পাঠানোর কারণে তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের মিশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

পিলখানার ভেতরে স্কুলে বিডিআর সদস্যদের সন্তানদের ভর্তির ব্যাপারে আরো ছাড় দেয়া, ঝুঁকিভাতার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন বিচারক।

“সেনাসদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ রেখে বিডিআর সদস্যরা দেশের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন। এ জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতো ২০ শতাংশ ভাতা তাদের পাওয়া উচিত। তাদের ঝুঁকিভাতা দেয়া যায় কি না, তাও দেখা উচিত।”

তবে প্রচারপত্র প্রসঙ্গে তিনি বলে, তারা যেভাবে লিফলেট প্রকাশ এবং প্রচার করেছে সেটা ঠিক হয়নি। কোন দাবিদাওয়া থাকলে নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা উচিত।

চার বছর আগে সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করা হয় মঙ্গলবার।

এ মামলার ৮৪৬ জন জীবিত আসামির মধ্যে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২৭৭ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। বাকি ২৫৬ জনকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ।