বাংলাদেশ ঘিরে বাড়ছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দূরত্ব

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের ব্যাপারে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ‘এক নয়’ বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

ভারত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2013, 10:56 AM
Updated : 30 Oct 2013, 11:36 AM

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ঢাকার কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে নয়া দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ‘অভিন্ন’ অবস্থানে পৌঁছেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এসব প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য আসেনি।”

ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মজীনাকে ভারতে ‘আমন্ত্রণ জানানো হয়নি’। তিনি নিজে থেকেই নয়া দিল্লি গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের নীতি তাকে ‘স্পষ্ট ভাষায়’ জানিয়েও দেয়া হয়েছে।

“আমরা বাংলাদেশে যে কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিপক্ষে। আমরা চাই, সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই ঠিক করুক।”

বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে- বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ায় ভারত সরকার কৃতজ্ঞ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবেশী এ দুই দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হযে দাঁড়ানো সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশ সক্রিয় হওয়ায় ভারত ‘সন্তুষ্ট’ বলেও উল্লেখ করেন কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ডেস্কের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে- ভারত তাকে স্বাগত জানায়।

“ঢাকায় যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, প্রতিবেশী হিসেবে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে বলেই আমরা আশা করি।”

ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয়ে কী ভূমিকা নেবে তা একান্তই তাদের ব্যাপার। তবে ভারতও একই পথে আছে- এমন বলাটা হবে ‘অন্যায্য’।

ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক এ বিষয়ে বলেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি কারো পক্ষ নিতে বা কাউকে সমর্থন করতে চায়- সেটা তাদের ব্যাপার। তবে কেউ যদি বলে যে, আমরাও তাদের সঙ্গে আছি, তা হবে দুঃখজনক।

“আমরা যেমন নিজেদের বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ সহ্য করি না, তেমনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়েও কারো হস্তক্ষেপ সমর্থন করি না।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট, যাতে বাংলাদেশের জনগণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।

“আমরা কোনো দলের মুখপাত্র নই, আবার কারো সঙ্গে আমাদের দূরত্বও নেই, যেমনটা অনেক দেশের থাকে। ১৯৭১ সালে কারা কোনো পক্ষে ছিল তা আমাদের সবার জানা।”

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানে চীনের পক্ষ থেকে যে আহ্বান জানানো হয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতীয় এই কূটনীতিক।

তিনি বলেন, “এটা একটা গঠনমূলক অবস্থান।”

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক বিবৃতিতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ‘সহিংসতার বদলে প্রজ্ঞার’ পরিচয় দিতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।