যেখানে মিলল সব স্বর

নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আর সংলাপের সম্ভাবনা নিয়ে টানটান উত্তেজনার মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গনের শীর্ষ ব্যক্তিরা হাজির হলেন একমঞ্চে, যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2013, 02:57 PM
Updated : 23 Oct 2013, 02:57 PM

দেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের যাত্রা শুরুর সাত বছর পূর্তির এই অনুষ্ঠানে রাজনীতিকরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন বিচারপতি-আইনজীবী, ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী-সংগঠক, ক্রীড়াবিদ-সংগঠক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা।

বুধবার সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গী করে রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীলতার ওপর জোর দেন, তেমনি গণমাধ্যমের মুক্ত পথচলা নিশ্চিতের জন্যও এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

সংবাদ সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ২০০৬ সালে রূপ বদলে দেশের মানুষের কাছে প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র হিসেবে পথচলা শুরু করে।

এই পথ চলার সপ্তম বছর পূর্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, যা অনুষ্ঠানে শামিল হওয়া রাজনীতিক-কূটনীতিক-ব্যবসায়ী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিসহ অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন তৌফিক খালিদী।

জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে আধা ঘণ্টার বক্তব্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং নবতর মাধ্যমে পথচলার ওপর আলোকপাত করেন।

এরপর কেক কেটে ‘ইতিহাস’ গ্রন্থনায়’ সাত বছর পূর্তি উদযাপন করে নৈশভোজে অংশ নেন অতিথিরা।

সমবেত অতিথিদের করতালির মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী অনুষ্ঠান মঞ্চে কেক কাটেন।

তাদের সঙ্গে মঞ্চে রাজনীতিকদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খান ও ওসমান ফারুক, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান।

রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও কেক কাটার আগে তাকে চলে যেতে হয়। আর কেক কাটার কিছু সময়ের মধ্যে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ।  

মঞ্চে ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক সালাউদ্দীন আহমদ, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুন-অর রশীদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ সাদিক।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূইঞাও ছিলেন মঞ্চে।

কূটনীতিকদের মধ্যে মঞ্চে ছিলেন রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার নিকোলায়েভ, ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার সন্দ্বীপ চক্রবর্তী ও জার্মানির উপরাষ্ট্রদূত।

ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান ও মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম পারভেজ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু মঞ্চে ছিলেন।

সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, সঙ্গীতশিল্পী অদিতি মহসিন ও মাকসুদুল হক,  ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব জোবেরা রহমান লীনু, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, একাত্তর বাংলাদেশের বন্ধু জুলিয়ান ফ্রান্সিসও মঞ্চে কেক কাটায় অংশ নেন।

অতিথিদের সঙ্গে মঞ্চে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রধান সম্পাদকের সঙ্গে ছিলেন সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর বেবী মওদুদ, আর্টস এডিটর কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা, জ্যেষ্ঠ সম্পাদক আমানুল্লাহ কবীর ও সুবীর ভৌমিক এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর মালিকানা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ।

নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, হাই কোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতিসহ শীর্ষ পর্যায়ের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন এই উদযাপন অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে রাজনীতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির ( জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বিএনপি নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, বরকতউল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ।

কবি আল মাহমুদ, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি মাহমুদ সাদিক, কবি রশীদ হায়দার, স্থপতি রবিউল হুসাইন শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে ছিলেন অনুষ্ঠানে। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক হারুন উর রশিদও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদুল হক, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোজাম্মেল হক, মাছরাঙা টেলিভিশনের সিইও ফাহিম মুনয়েম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পরিবারকে শুভেচ্ছা জানান।

হাই কোর্টের বিচারপতিদের পাশাপাশি ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, মো. আজাহার উল্লাহ ভূইয়া, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, মো. সেলিম, অমিত তালুকদার, দেলোয়ার হোসেন সমাদ্দার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, ডিসিসিআই সভাপতি মো. সবুর খান, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ, নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমেদ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আল মারুফ খান, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমসের সিইও ইয়াওয়ার সাঈদ ছিলেন অনুষ্ঠানে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সৈয়দ হাসান ইমাম, বিটিভির মহাপরিচালক ম, হামিদ, নাট্যব্যক্তিত্ব ও শিশু একাডেমীর পরিচালক ফাল্গুনী হামিদ, সুরকার মকসুদ জামিল মিন্টু, নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, সংগীত শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল, ইবরার টিপুও ছিলেন অনুষ্ঠানে। বেসরকারি সংস্থা খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট রোকসানা খন্দকারও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

নৌবাহিনীর উপপ্রধান রিয়ার এডমিরাল এম মকবুল হোসেন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের উপাচার্য মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদ, নৌবাহিনীর গোয়েন্দা শাখার পরিচালক এম সোহায়েলসহ তিন বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেছুর রহমান, ঢাকা মহানগরের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান, সহকারী কমিশনার মো. আবু ইউসুফসহ পুলিশ কর্মকর্তারাও ছিলেন অনুষ্ঠানে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ও সংগঠক মারুফ রসুলও শামিল হন এই উদযাপন অনুষ্ঠানে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, প্যালেস্টাইনসহ বেশ কয়েকটি দেশের মিশনের প্রতিনিধিরা অংশ শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে উপস্থিত হন র‌্যাডিসনের বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে।

সাত বছর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বাংলাদেশের ও বাংলাভাষীদের জন্য ইন্টারনেটে সংবাদ জগতের যে নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছিল, তার পথ ধরে আজ এগোচ্ছেন অরো অনেকে।

দেশের প্রথম এই ২৪ ঘণ্টার নিউজ পোর্টালের বার্তা সম্পাদক বলেন, “সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনের মধ্য দিয়ে গত সাত বছর ধরে আমরা কার্যত ইতিহাস গ্রন্থনার কাজটিই করে আসছি। আমরা মনে করি, সব দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যমকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হয়।”  

শুরুটা হয়েছিল ২০০৫ সালে। অন্যান্য বার্তা সংস্থার মতো ‘বিডিনিউজ’ তখন সংবাদ মাধ্যমগুলোর জন্য খবর সরবরাহ করতো। তবে দেশের অন্য সংবাদ সংস্থাগুলো টেলিপ্রিন্টারে খবর সরবরাহ করলেও বিডিনিউজ এ কাজটি করা শুরু করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

২০০৬ সালে বার্তা সংস্থাটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা বদলের পর বদলে যায় এর খোল-নলচে। সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর নেতৃত্বে নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের প্রথম ডটকম কোম্পানির রূপ দেয়। নতুন আঙ্গিকে এর পরিচয় হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে।

২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবরের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ রাত ১২টা ০১ মিনিটে ওয়েবসাইটটি সব পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র।

দিনে দিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাজের ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি মিলেছে পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের সাড়া।

গুগল অ্যানালিটিকসের তথ্য অনুযায়ী,  ২৩৫টি দেশ ও সার্বভৌম অঞ্চলের পাঠকের দৃষ্টি এখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাতায় পৌঁছাচ্ছে।

২০১১ সালে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে ২০ লাখের মতো পাঠক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পড়তেন, এখন তা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

প্রতি মাসে এখন সাড়ে ৪ কোটি বার পড়া হচ্ছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পৃষ্ঠা। গড়ে আট কোটি মিনিট পাঠক ব্যয় করছেন এই সাইটে।

গত মে মাসে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও তাণ্ডবের দিনে ১০ লাখেরও বেশি পাঠক তাৎক্ষণিক সংবাদের জন্য চোখ রেখেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে।

সময়ের উদ্ভাবনী মেজাজকে ধারণ করে গত সাত বছরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইটে যুক্ত হয়েছে ‘মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট’। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে থেকেও পাঠক এখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সঙ্গে পাচ্ছে সর্বক্ষণ। 

২০১১ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যখন তাদের পঞ্চম বর্ষপূতি উদযাপন করে, ফেইসবুক পেইজে তখন তাদের ফ্যান সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ২৫৭। আর দুই বছর পেরিয়ে সেই সংখ্যা এখন ৫ লাখ ৬৫ হাজারে পৌঁছেছে।