উড়িষ্যা উপকূলে সতর্কতা, সরানো হল ৩ লাখ মানুষ

ঘূর্ণিঝড় পাইলিন আঘাত হানার আগে উড়িষ্যা উপকূলের তিন লাখ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে, শক্তিশালী এই ঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে সেখানে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2013, 04:54 AM
Updated : 12 Oct 2013, 05:08 AM

ভয়ঙ্কর শক্তি নিয়ে উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়, শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।   

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্র বন্দরে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ভারতের আয়তনের প্রায় অর্ধেক বিস্তৃতির ভয়ঙ্কর এই ঝড় উপকূলে পৌঁছানোর পর আরো শক্তিশালী হয়ে স্যাফির-সিম্পসন হারিকেন উইন্ড স্কেলে সর্বোচ্চ শক্তিশালী ৫ মাত্রার ‘সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে বলেও আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন। এই ঘূর্ণিঝড়টিতে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রলয়ঙ্করী সাইক্লোন ক্যাটরিনার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, উড়িষ্যা উপকূলের সঙ্গে অন্ধ্র প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে এই ঝড়ের প্রভাব পড়বে। বাতাসের ২৩০ কিলোমিটার তীব্রতা নিয়ে এটি আঘাত হানতে পারে।

শনিবার সকালে এই ঝড়টি উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ থেকে ৩৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ভারতের বড় বন্দরগুলোর একটি প্যারাদ্বীপে সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

উড়িষ্যার রাজ্য সরকার বলেছে, ঝড় মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপকূলের ৩ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

১৯৯৯ সালে এক ঝড়ে উড়িষ্যায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সর্বোচ্চ সতর্কতা রয়েছে বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক জানিয়েছেন।

রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী সূর্য নারায়ণ পাত্র এনডিটিভিকে বলেন, “আমরা প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে পুরোপুরি তৈরি। এবার আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে, যা ১৯৯৯ সালে ছিল না।”

ঝড়ের বেশি প্রভাব উড়িষ্যার সাতটি জেলায় পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই জেলাগুলোতে ২৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের সঙ্গে আরো ১০০টি  অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র পাইলিনকে সর্বোচ্চ মাত্রার সাইক্লোন বললেও এখনো তা মানতে চায়নি ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। তারা বলছে, একে ‘অতিপ্রবল’ বলা যায়, তার চেয়ে এক মাত্রা বাড়িয়ে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলার সময় এখনো আসেনি।

হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার এই সময়ে ভারতের এ দুই প্রদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।  

এশীয় দেশগুলোতে সামুদ্রিক ঝড়ের নামকরণের রীতি অনুযায়ী, এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নামটি নেয়া হয়েছে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া দপ্তরের প্রস্তাবিত তালিকা থেকে। থাই ভাষায় পাইলিন অর্থ ‘নীলকান্তমণি’।

ভারত উপকূলমুখী এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট উুঁচ জোয়ার হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

শনিবার সকাল ৯টায় ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আরো দূরে সরে ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিম এবং কক্সবাজার বন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। তবে ১২ ঘণ্টায় মংলা বন্দর থেকে এর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার কমেছে। সকাল ৯টায় মংলা থেকে এটি ৬৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আগের মতোই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেত বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।