এবার আলীমের যুদ্ধাপরাধের রায়

বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমের যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2013, 05:11 AM
Updated : 8 Oct 2013, 08:35 AM

একাত্তরে হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং এসব অপরাধে উস্কানি ও সহযোগিতার ১৭টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে।

আসামি ও প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থপন শেষে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ গত ২২ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। ওইদিন জামিন বাতিল করে জিয়াউর রহমানের আমলের এই মন্ত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ আদালতের তিন বিচারক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও শাহিনুর ইসলাম বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এটি হবে অষ্টম রায়। আলীম হচ্ছেন বিএনপির দ্বিতীয় নেতা, যার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় হতে যাচ্ছে।

এর আগে সর্বশেষ ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ট্রাইব্যুনাল-১।

২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর গত বছরের ১১ জুন ৭ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৭টি অভিযোগে আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে তিনটি গণহত্যা, একটি আটক, একটি দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং ১২টি হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

১৫টি হত্যা ও গণহত্যার ঘটনায় মোট ৪০৬ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের।

গত ২২ সেপ্টেম্বর আলীমের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করিনি। তবে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে বাকি সবগুলো অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী, আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি।”

প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, আব্দুল আলীম যেহেতু একজন আইনজীবী ছিলেন এবং একজন শিক্ষিত-সচেতন নাগরিক হয়েও অপরাধ সংগঠনে সাহায্য করেছিলেন- সেহেতু ওইসব ঘটনার জন্য তাকে ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবল’ হিসাবে ধরা যায়।

তবে আব্দুল আলীমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, “আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ভিত্তিহীন বাগাড়ম্বর।প্রসিকিউশন গৎবাধা কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধী সাজাতে চায়।”

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণে আলীম সাহেবের একদিনের শাস্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”

২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আলীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর চার দিন পর  অশীতিপর এই ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা মুচলেকায় ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেয়া হয়, যার মেয়াদ পরে বাড়ানো হয় কয়েক দফায়।

গত আড়াই বছর জামিনে মুক্ত আলীম আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বনানীতে তার ছেলের বাড়িতে অবস্থান করেন। ফয়সাল আলীম মোবাইল ফোনের কনটেন্ট প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান উইনটেলের মালিক।

২০১২ সালের ৯ জুলাই এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ প্রসিকিউশনের মোট ৩৫ জন আলীমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে তার ছেলে সাজ্জাদ ছাড়াও সাক্ষ্য দেন জয়পুরহাটের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী ও মো. মোজাফফর হোসেন।

১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলীম। ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জিয়াউর রহমানের সরকারে প্রথমে বস্ত্রমন্ত্রী এবং পরে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন আলীম।

এর আগে ট্রাইব্যুনালের ৭টি রায়ে জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান ছয় নেতা এবং বিএনপির একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। 

এর মধ্যে প্রথম রায়ে জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে।

দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন হলেও আপিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট তাকে প্রাণদণ্ড দেয়। 

তৃতীয় রায়ে  জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং চতুর্থ রায়ে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমীর গোলাম আযমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উস্কানির দায়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

গত ১৭ জুলাই জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।  আর সর্বশেষ ১ অক্টোবর ফাঁসির আদেশ হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।