ভেজাল ওষুধ বিক্রেতাদের মুক্তির আশ্বাস

সাধারণ মানুষকে ‘জিম্মি করে’ সারা দেশে ওষুধ ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট শুরু করার পর তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2013, 09:18 AM
Updated : 3 Oct 2013, 09:23 AM

ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঔষধ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ বিক্রির দায়ে যাদের জেল জরিমানা করা হয়েছে, সাত দিনের তাদের মুক্তি দেয়া হবে। বন্ধ করে দেয়া ফার্মেসিও খুলে দেয়া হবে।

ভেজাল ও অবৈধ ওষুধ বিক্রি রোধে অভিযানের যৌক্তিকতা মেনে নিলেও ধর্মঘট প্রত্যাহারে কোনো ঘোষণা দেননি বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ফার্মেসি সিলগালা, গ্রেপ্তার ও জরিমানার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারা দেশে ওষুধের দোকান বন্ধ রেখে ধর্মঘট করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে জরুরি ওষুধের খোঁজে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

এই পরিস্থিতিতে দুপুরে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ঔষধ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক।

বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “যেসব ব্যবসায়ীকে জেল জরিমানা করা হয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত করতে তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগামী সাত দিনের মধ্যে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

গত ২৮ সেপ্টেম্বর মিটফোর্ড-বাবুবাজারের সমিতি মার্কেট, ইউসুফ মার্কেট, আলী মার্কেট, নায়না মার্কেট, খান মার্কেট, নুরপুর মার্কেট, ঢাকা মার্কেট ও সুরেশ্বর মার্কেটে অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবৈধ  ওষুধ জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ২৮টি ওষুধের দোকান সিলগালা এবং এক কোটি ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আটক করা হয় ১০৩ জনকে।

এর প্রতিবাদেই বৃহস্পতিবার ওষুধ ব্যবসায়ীদের এই ধর্মঘট।

জাহাঙ্গীর হোসেন মল্লিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওই অভিযানে সিলগালা করে দেয়া দোকানগুলোও খুলে দেয়া হবে।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাদিকুর রহমান বলেন, “গত ২৮ সেপ্টেম্বরে যে অভিযান হয়েছিল তার সূত্র ধরেই আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। আমরা মাননীয় মহাপরিচালককে চিঠি লিখেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদেরকে আগে সময় দেননি। আমরা বলেছিলাম ২ অক্টোবরের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে না নিলে ধর্মঘট করব।”

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ধর্মঘট অব্যহত রেখেই তারা  আলোচনা করতে এসেছেন এবং ১৬টি দাবি তুলে ধরেছেন। এ নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে।

“নকল ও অবৈধ ওষুধ মানুষের জীবন হরণ করে- এ বিষয়ে আমাদের দ্বিমত প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই।”

জনগণকে ‘জিম্মি করে’ ব্যবসা করা যে ‘সম্পূর্ণ অনৈতিক’, তাও সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন সমিতির সভাপতি।

তিনি বলেন, “মানুষ দুর্ভোগে পরেছে এটা ঠিক। তবে আমরা ধর্মঘটে বাধ্য হয়েছি। গত ১০ বছরে কোনো ধর্মঘটে যাইনি। কিন্তু এবার অস্তিত্বের লড়াইয়ের কারণে আমরা বাধ্য হয়েছি।”

ওষুধ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো আগামী সোমবারের মধ্যে সমিতির কেন্দ্রীয় ও শাখা কমিটিকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।

“ঈদের আগে আমরা আন্দোলনে থাকব কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

তবে ‘এই মুহূর্তে’ ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো চিন্তা নেই জানিয়ে সাদিকুর রহমান বলেন, সারা দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী ঘোষণা দেয়া হবে।

ঔষধ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, বর্তমানে দেশে ২৪ হাজার ব্রান্ডের ওষুধ আছে।

“আমাদের ওয়েবসাইটে ওষুধের যে তালিকা আছে, তা কপি করে ব্যবসায়ীদের দেয়া হবে।” 

অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, ওষুধ সমিতির সহসভাপতি আব্দুল হাই, স্বাস্থ অধিদপ্তরের পরিচালক গোলাম কিবরিয়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।