রূপপুরে ‘স্বপ্ন পূরণের’ ভিত্তি স্থাপন

উদ্যোগ নেয়ার প্রায় অর্ধশতক পর পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2013, 05:50 AM
Updated : 2 Oct 2013, 01:42 PM

তিন থেকে চারশ কোটি ডলারে দুই ইউনিটে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ২০২১ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকাল ১১টা ২১ মিনিটে রূপপুর প্রকল্পের মাঠে এই ‘স্বপ্নের প্রকল্পের’ প্রথম পর্যায়ের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।  

রাশিয়ান ফেডারেশনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাশিয়ার আনবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের মহা পরিচালক সের্গেই ভি কিরিয়েনকোও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে করে রূপপুরে নামার পর সরাসরি প্রকল্প মাঠে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। ভিত্তি ফলক উন্মোচনের পর তিনি মুনাজাতে অংশ নেন।    

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পদ্মা নদীর তীরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিচ্ছে রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা রোসাটম।

তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুয়ায়ী, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে রুশ সরকার। কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানিও তারা সরবরাহ করবে এবং ব্যবহৃত জ্বালানি ফেরত নেবে।

গত জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি গবেষণার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার একটি চুক্তি হয়।

১৯৬১ সালে পরামানু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে বেছে নেয়া হয় রূপপুরকে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “৫০ বছরের স্বপ্ন পূরণের জায়গায় এসে গেছি আমরা। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী এতোদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করবেন।”

রাশিয়া থেকে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে।

দুই ইউনিটের দুই হাজার মেগাওয়াট উতপাদন ক্ষমতার প্রস্তাবিত এ কেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২৬২ একর জমি।

নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির মানের ওপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের প্রতিটি স্থাপনে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এই নির্মাণ ব্যয়ের ১০ শতাংশের অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার, বাকি ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসাবে দেবে। 

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ হবে ৬০ বছর। পরে তা আরো ২০ বছর তা বাড়ানো যাবে বলে এর আগে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা তৈরির জন্য সোমবার ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের একটি দরপ্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ কাজ পেয়েছে অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট নামের একটি রুশ কোম্পানি। নকশা প্রস্তুতের পর কেন্দ্র নির্মাণের মূল কাজ শুরু হবে।

কতোদিনে নকশা তৈরি হবে জানতে চাইলে ইয়াফেস ওসমান বলেন, “তারা দুবছরের কথা বলেছে, আমরা বলেছি দেড় বছর।“ 

রূপপুর কেন্দ্র কবে নাগাদ উৎপাদনে যাবে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে দু হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।”

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ৫০ বছর আগের নেয়া উদ্যোগ সক্রিয় করে তোলা হয়। দ্রুত পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাবও পাস করা হয়, গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি। 

ওই বছরই রাশিয়ার সঙ্গে একটি কাঠামো চুক্তি করে সরকার এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ দুই দেশ চুক্তি করে।

বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলার জন্য সরকারের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৫০ শতাংশ হবে কয়লাভিত্তিক এবং বাকিটা হবে অন্যান্য জ্বালানি নির্ভর।

মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য একটি তথ্য কেন্দ্র উন্মুক্ত করা হয়েছে। যে কেউ এখানে গিয়ে প্রস্তাবিত এ কেন্দ্রটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।